পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৪
বাংলা শব্দতত্ত্ব

করিয়াছিলেন। কিন্তু লেখক কখনােই সচরাচর কথােপকথনে এরূপ অর্থে হুজুক ব্যবহার করেন না।

 ইনিই বলিতেছেন, ‘ন্যাকামি— অভিমানবশত কিছুতে অনিচ্ছা প্রকাশ অথবা ইচ্ছাসত্ত্বে অভিমানীর অনিচ্ছা প্রকাশ।’

 স্থলবিশেষে অভিমানচ্ছলে কোনাে ব্যক্তি ন্যাকামি করিতেও পারে, কিন্তু তাই বলিয়া অভিমানবশত অনিচ্ছা প্রকাশ করাকেই যে ন্যাকামি বলে তাহা নহে।

 আহ্লাদে শব্দের ব্যাখ্যা করিতে গিয়া ইনি বলেন, ‘দশজনের আহ্লাদ পাইয়া অহংকৃত।’ প্রশ্রয়প্রাপ্ত, অহংকৃত এবং ‘আহ্লাদে’-র মধ্যে যে অনেক প্রভেদ এতাে বলাই বাহুল্য।

 হুজুগ শব্দের নিম্নলিখিত প্রাপ্ত সংজ্ঞাগুলি পরে পরে প্রকাশ করিলাম।

হুজুগ

 ১। বিস্ময়জনক সংবাদ যাহা সত্য কি মিথ্যা নির্ণয় করা কঠিন।

 ২। অকারণ বিষয়ে উদ্যোগ ও উৎসাহ (অকারণ শব্দের দুই অর্থ—১ অনির্দিষ্ট; ২ তুচ্ছ, সামান্য)।

 ৩। অল্পেতে নেচে ওঠার নাম।

 ৪। অতিরঞ্জিত জনরব।

 [১]

 ৬। ফল অনিশ্চিত এরূপ বিষয়ে মাতা।

 ৭। কোনাে এক ঘটনা, লােকে যাহার হ্যাপায় প’ড়ে স্রোতে ভাসে। ‘বাজারদরে নেচে বেড়ানো।’ ‘ঝড়ের আগে ধুলা উড়া।’

 ৮। ফস্ কথায় নেচে ওঠা।

 ৯। দেশব্যাপী কোনাে নূতন (সত্য এবং মিথ্যা) আন্দোলন।

 ১০। বাহ্যাড়ম্বরে মত্ততা।

 প্রথম সংজ্ঞাটি যে ঠিক হয় নাই তাহা ব্যক্ত করিয়া বলাই বাহুল্য।

  1. মূলে মুদ্রাকরপ্রমাদ।