পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রতিশব্দ
১৮৭

বলা চলে না। মৌলিক কাব্য বলিলেও যে সুশ্রাব্য হয় তাহা নহে, তবু চোখ কান বুজিয়া সেটাকে কণ্ঠস্থ করা যায়।

 এইজন্যই কুলীন শব্দে যেমন কুলগৌরব প্রকাশ করে তেমনি মূলীন শব্দে মূল গৌরব প্রকাশ করিবে এই মনে করিয়াই ওই কথাটাকে আশ্রয় করিয়াছিলাম। কিন্তু শাস্ত্রীমহাশয় বলিয়াছেন কুলীন শব্দ ব্যাকরণের যে-বিশেষ নিয়মে উৎপন্ন মূলীন শব্দে সে নিয়ম খাটে না। শুনিয়া ভয় পাইয়াছি। ভুল পুরাতন হইয়া গেলে বৈধ হইয়া উঠে, নূতন ভুলের কৌলীন্য নাই বলিয়াই ভাষায় তাহা পঙ্‌ক্তি পায় না। বাংলায় সংস্কৃত ব্যাকরণের ব্যভিচার অনেক চলিয়াছে; কিন্তু আজকালকার দিনে পূর্বের চেয়ে পাহারা কড়াক্কড় হওয়ায় সে সম্ভাবনা আর নাই। অতএব জাতমাত্রই মৌলীন্য শব্দের অন্ত্যেষ্টি সৎকার করা গেল।

 ভাদ্র ১৩২৬

বাংলায় ‘অপুর্ব’ শব্দ বিশেষ অর্থে প্রচলিত হইয়াছে।[১] ‘অপূর্ব সৌন্দর্য’ বলিতে আমরা original beauty বুঝি না। যদি বলা যায় কবিতাটি অপূর্ব তাহা হইলে আমরা বুঝি তাহার বিশেষ একটি রমণীয়তা আছে, কিন্তু তাহা যে original এরূপ বুঝি না। ইংরেজিতে যাহাকে original man বলা যায় তিনি চিন্তায় কর্মে বা আচরণে অন্য কাহারো অনুসরণ করেন না। বাংলায় যদি তাঁহাকে বলি ‘লোকটি অপূর্ব’ তাহা হইলে সেটা ঠাট্টার মতো শোনায়। বোধ হয় এরূপ প্রসঙ্গে স্বানুবর্তী ও স্থানুবর্তিতা কথাটা চলিতে পারে। কিন্তু রচনা বা কর্ম সম্বন্ধে ও কথাটা খাটিবে না। ‘আদিম’ শব্দটি বাংলায় যদি ‘primitive’ অর্থে না ব্যবহৃত হইত তাহা হইলে ওই শব্দটির প্রয়োগ এরূপ স্থলে সংগত হইত। বিশেষ কবিতাটি আদিম বা তাহার মধ্যে আদিমতা আছে বলিলে ঠিক ভাবটি বোঝায়। বস্তুত, অপূর্ব=strange, আদিম=original। অপূর্ব সৌন্দর্য=strange beauty, আদিম সৌন্দর্য=original

  1. বিধুশেখর শাস্ত্রী মহাশয় প্রতিশব্দ প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতন পত্রে (ভাদ্র ১৩২৬) আলোচনা প্রসঙ্গে originality-র প্রতিশব্দরূপে ‘অপূর্বতা’ শব্দের ব্যবহার প্রস্তাব করেন।