পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাদানুবাদ

গতবারকার শান্তিনিকেতন পত্রের “বাংলা কথ্যভাষা” ও “অনুবাদ-চর্চা”-র দুইটি অংশের প্রতিবাদ করিয়া শ্রীযুক্ত যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নিম্নলিখিত পত্রটি পাঠাইয়াছেন।

 “আশ্বিনের শান্তিনিকেতনে ‘বাংলা কথ্য-ভাষা’ নামক প্রবন্ধে লেখক বলিয়াছেন ‘বাংলায় দুই অক্ষরের বিশেষণমাত্রই স্বরান্ত।’ কিন্তু ইহার ব্যত্যয় আছে যথা—বদ, সব, লাল, নীল, পীত, টক, বেশ, শেষ, মূল, ভুল, খুব ইত্যাদি।

 “হসন্ত সম্বন্ধে পাগল্‌-পাগলা, আপন-আপ্‌নি ইত্যাদি নিয়মেরও ব্যতিক্রম আছে; যথা দরদ্‌-দরদী, এ কথাটা পারসী কিন্তু হজম্‌-হজ্‌মিও পারসী। তার পর “দরদী” কথাটা ত আর পারসী নয়—ওটা যখন বাংলা তখন বাংলার নিয়মে এর উচ্চারণ হওয়া উচিত ছিল।

 “‘অনুবাদচর্চা’ প্রবন্ধের ‘এবং’ শব্দের ব্যবহারনির্দেশক নিয়ম সম্বন্ধে সন্দেহ হইতেছে। ‘তাঁর অনেক শত্রু আছে এবং তারা সকলেই শক্তিশালী’ আমার ত মনে হয় এরূপ প্রয়োগ বাংলায় বেমানান হয় না। তার একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ এই যে, যে-বাক্যটির অনুবাদ আলোচনা করিতে গিয়া লেখক ‘এবং’-এর নিয়ম নির্দেশ করিয়াছেন তার লেখককৃত তর্জমাতেই ইহার ব্যতিক্রম আছে—যথা ‘এমন অনেক জাতীয় পাখি আছে যাহাদের যুদ্ধোপকরণ এবং অভ্যাস সকল কীট আক্রমণের পক্ষে বিশেষ উপযোগী এবং যাহারা কীট শিকারেই সমস্ত জীবন যাপন করে’, এখানে শেষের এবংটি ‘হয়’ ও ‘করে’ এই দুই ভিন্ন ক্রিয়াকে যোগ করিতেছে।”

 এই প্রতিবাদ সম্বন্ধে আমাদের বক্তব্য নিম্নে লিখিলাম।

 দুই অক্ষরের বিশেষণ শব্দ কোনো কোনো স্থলে স্বরান্ত হয় না তাহা আমি মানি—কিন্তু আমাদের ভাষায় তাহার সংখ্যা অতি অল্প। লেখক তাহার উদাহরণে ‘পীত’ শব্দ ধরিয়া দিয়াছেন। প্রথমত, ঐ শব্দ চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয় না। দ্বিতীয়ত যেখানে হইয়াছে সেখানে উহা হসন্ত নহে। যেমন ‘পীত ধড়া’। কখনোই ‘পীৎ-ধড়া’ বলা হয় না। ‘পীৎ-বর্ণ’, কেহ কেহ বলেন, কিন্তু পীত-বর্ণ’ই বেশির ভাগ লোকে বলিয়া থাকেন। লেখক যে-কয়টি শব্দের তালিকা