পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩০
বাংলা শব্দতত্ত্ব

আপনার পয়োধর দেখিয়া হাসেন। সে পয়োধর কিরূপ? না, প্রথমে বদরির (কুল) ন্যায় ও পরে নারাঙ্গার ন্যায়।” নবরঙ্গ শব্দের অর্থ নারাঙ্গা অভিধানে নাই। ‘নাগরঙ্গ’ ও ‘নার্য্যঙ্গ’ শব্দ নারাঙ্গা বলিয়া উক্ত হইয়াছে। কিন্তু নবরঙ্গ শব্দের অর্থ নারাঙ্গা, সহজেই অনুমান করা যাইতে পারে। বিদ্যাপতির আরএকটি পদ হইতে এই একই ভাবের দুইটি চরণ উদ্ধৃত করিয়া দিতেছি, তাহাতে আমাদের কথা আরো স্পষ্ট হইবে।

পহিল বদরী কুচ পুন নবরঙ্গ।
দিনে দিনে বাঢ়য়ে, পীড়য়ে অনঙ্গ। পৃ. ২২০

 ৩-সংখ্যক পদে সম্পাদক

খেলত না খেলত লোক দেখি লাজ।
হেরত না হেরত সহচরী মাঝ। পৃ. ৩

 এই দুই চরণের অর্থ করিতেছেন: “খেলার সময় হউক বা না হউক লোক দেখিলে লজ্জিত হয় ও সহচরীগণের মধ্যে থাকিয়া একবার দৃষ্টি করে ও তখনি অপর দিকে দৃষ্টিক্ষেপ করে।” “খেলত না খেলত” এবং “হেরত না হেরত” উভয়ের একই রূপ অর্থ হওয়াই সংগত বোধ হয়; উভয়ের বিভিন্ন অর্থ মনে লয় না। “খেলত না খেলত” অর্থে সম্পাদক কহিতেছেন “খেলার সময় হউক বা না হউক” অর্থাৎ খেলে বা না খেলে; তাহা যদি হয় তবে “হেরত না হেরত” শব্দের অর্থ “দেখে বা না দেখে” হওয়াই উচিত; কিন্তু তাহা হইলে কোনো অর্থই হয় না। ইহার অর্থ নিম্নলিখিত রূপ হওয়াই উচিত; খেলে, খেলে না; লোক দেখিয়া লজ্জা হয়। সহচরীদের মধ্যে থাকিয়া দেখে, দেখে না।” অর্থাৎ খেলিতে খেলিতে খেলে না; দেখিতে দেখিতে দেখে না ইহাই ব্যাকরণ-সম্মত ও অর্থ-সংগত।

নয়ন নলিনী দউ অঞ্জনে রঞ্জিত
ভাঙবি ভঙ্গি-বিলাস।   সং ৭, পৃ. ৮

 সম্পাদক “ভাঙবি’ শব্দের অর্থ “প্রকাশ করিতেছে” লিখিয়াছেন। তিনি কহেন “ভাঙ[১] বিভঙ্গি-বিলাস এই পাঠ সংগত বোধ হয় না। ব্যাকরণ ধরিতে

  1. ভাঙ শব্দের অর্থ ভ্রূ।