পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪২
বাংলা শব্দতত্ত্ব

 কোনাে ব্যক্তি কোনাে পুস্তকের টীকা করিবার পূর্বে এরূপ প্রতিজ্ঞা করিতে পারেন না, যে, তিনি যাহা লিখিবেন তাহাই নির্ভুল হইবে। আমরা যত দুর কাব্যসংগ্রহ পাঠ করিয়াছি তাহার কোনাে স্থানেই সম্পাদক শ্রীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার এ প্রকার প্রতিজ্ঞা করেন নাই, সুতরাং চুক্তিভঙ্গের নালিশ তাঁহার উপর চলে না। কবিদিগের প্রতি অবিচার করার দাবিও করা যাইতে পারে না। কারণ কবিদিগের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভক্তি না থাকিলে সম্পাদক এ কার্যে হস্তক্ষেপ করিতেন কি না সন্দেহ। আমাদের বােধ হয় সাধারণ পাঠকবর্গ সম্পাদক যাহা-কিছু লিখিয়াছেন, তাহাই ভুল-শূন্য এ প্রত্যাশা করিয়া প্রাচীন কাব্য সংগ্রহ পাঠ করিতে আরম্ভ করেন না। সুতরাং তাঁহারা উক্ত পুস্তকমধ্যে স্থানে স্থানে ভুল ব্যাখ্যা দেখিলে বােধ হয়, বিস্মিত হয়েন না।

 শ্রীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার অকাতরে পরিশ্রম করিয়া, মহাজন পদাবলী সংগ্রহ করিয়াছেন। দুরূহ শব্দের অর্থ করিয়াছেন; এমন-কি, লুপ্তপ্রায় পদাবলী সমূহকে মনােহর বেশভূষায় ভূষিত করিয়া, সাহিত্যজগতে আনয়নপূর্বক সাহিত্যপ্রিয় ব্যক্তিমাত্রেরই কৃতজ্ঞতার পাত্র হইয়াছেন। প্রবন্ধে লেখকমহাশয় লিখিয়াছেন, যে, তিনি তজ্জন্য সম্পাদককে উৎসাহ দিলেন। কিন্তু কিরূপে যে তিনি উৎসাহ দিলেন, তাহা আমাদিগের বােধগম্য হইল না। বরং তিনি প্রকারান্তরে সম্পাদককে অলস অমনােযােগ প্রভৃতি বলিয়াছেন। তাঁহার লেখার ভাবে বােধ হইল, যে, সম্পাদকের নিন্দা করিবার অভিপ্রায়েই তিনি লেখনী ধারণ করিয়াছিলেন।[১]

 তৎকর্তৃক-সম্পাদিত পদাবলীর গুণাগুণ ব্যাখ্যা করা তাঁহার অভিপ্রায় ছিল। নতুবা সম্পাদককে লজ্জিত করিবার জন্য এত চেষ্টা কেন? তাঁহার প্রতি এত তীব্র বিদ্রূপ নিক্ষেপ কেন? আমরা বলিয়াছি প্রবন্ধ-লেখক অনেক স্থানে সম্পাদকের অযথা নিন্দা করিয়াছেন, যাহা স্পষ্ট ভুল নহে তাহাকে ভুল প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, এক্ষণে দৃষ্টান্ত দ্বারা দেখাইব যে আমাদের কথা সত্য। তিনি লিখিয়াছেন―

‘অলখিতে মােহে হেরি বিহসিতে থােরি।
জনু বয়ান বিরাজে চাঁদ উজোরি।


  1. সুরুচি-সম্পন্ন পাঠকদিগের নিকট এ কথাটার উত্তর দিবার আবশ্যক বিবেচনা করিতেছি না। লেঃ―