পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b-Գ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড በ 8ኡ ብ এল, পাইনস বনপাড়া মিশন থানা-বড়ইগ্রাম জেলা-রাজশাহী ২০শে এপ্রিল ১৯৭১ সাল। মিলিটারীরা বনপাড়ার আশেপাশে আসে এবং বিক্ষিপ্তভাবে গোলাগুলি চালালে হারোয়াতে চারজন লোক মারা যায়। তারপর থেকে মাঝে মাঝে পাক নরপশুরা অপারেশন চালাতে থাকে। তার প্রতিক্রিয়া বনপাড়া এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অমুসলমানরা পালিয়ে আসে মিশন হাসপাতালে। মিশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা যত্নসহকারে করতে থাকেন। তখন অবশ্য পাক সৈন্যরা নাটাের ও রাজশাহীতে চলে গিয়েছিল। তখন স্থানীয় দৃস্কৃতকারীর হিন্দুদের অন্যায় ও ক্ষতিসাধন করে। তাদের পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর লুট করে। তখন থেকেই ২/১ জন করে অমুসলমান ওপার বাংলায় পালিয়ে যেতে থাকে। ২রা মে রাতে অমুসলমানরা ওপার বাংলায় চলে যাবে বলে স্থির করেছিল। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের দরুন সেদিন যেতে পারেনি। ৩রা মে। বিকাল সাড়ে তিনটার সময় মিশনের ফাদার লক্ষ্য করলেন যে, মিশন হাসপাতালের চারিদিকে মিলিটারীরা ঘিরে নিয়েছে। তার কিছুক্ষণ আগে বনপাড়া সংলগ্ন অন্যান্য গ্রাম থেকে খৃষ্টান পুরুষদের ধরে নিয়ে এসেছে। সে ধরার অভিযান পরিচালনা করেছিল মেজর শেরওয়ানী। পরে ফাদারের সুপারিশে সমস্ত খৃষ্টনদেরকে নরপশুরা ছেড়ে দেয়। তারপর নরপশুরা মিশনের অফিস, স্কুলঘর, মহিলা হোষ্টেল তল্লাশি করে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দুদেরকে খুঁজতে থাকে। খোঁজাখুঁজির পর সর্বমোট ৮৬ জন মানুষকে বের করে এবং বন্দী করে। অবশ্য অল্প বয়সের ছেলেরা ও বৃদ্ধেরা রেহাই পেয়েছিল তাদের মনোভাবের উপর নির্ভর করে। তারপর বন্দী লোকদেরকে ধরে নিয়ে মোড়ে ট্রাকের অপেক্ষায় পথপানে চেয়ে থাকে। সত্যি সত্যিই যখন সামরিক ট্রাক এসে হাজির হলো তখন ট্রাকে তুলে ৮৬ জন মানুষকে নিয়ে যায় হত্যা করার জন্য। পথিমধ্যে একজন বৃদ্ধকে রেহাই দিয়ে অন্যান্য বন্দীদেরকে নির্মমভাবে প্রহার করতে করতে নিয়ে যায় তাদের নির্দিষ্ট স্থানে। ৮৫ জন লোককে নিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্য অনিল নামক একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। এ ঘটনা অবশ্য ফাদারের শোনা। দোয়াদপাড়া ব্রীজে নিয়ে হত্যা করা হয়। অনিল ফাদারকে বলে যে, এখান থেকে মাইল দুই নিয়ে যেয়ে রাইফেলের গাদা দিয়ে অমানুষিকভাবে ট্রাকের উপরেই প্রহার শুরু করে। দেয়াদপাড়া ব্রীজের কাছে একটি জলাশয়ে নিয়ে যেয়ে উপরে উল্লিখিত মানুষগুলোকে ২/৩ জন করে ধরে নিয়ে গুলি করতে থাকে। অনিলকে গুলি করে কিন্তু সে আঘাতে মরেনি। নাটোরের হাফিজ আবদুর রহমান অন্যান্য অপারেশনের মত এখানেও উপস্থিত ছিল। সবশেষে আহত লোকদের উপর মেশিনগানের স্প্রে শুরু করে। অনিলের উরুতে মেশিনগানের একটি গুলি লাগে। এতেও সে খুব বেশী আহত হয় না। ফলে রাতে বর্বররা সরে গেলে সে আস্তে আস্তে স্বগ্রামে ফিরে আসে। পাক বাহিনী যাবার আগে গ্রামবাসী মুসলমানদের ডেকে এনে এই স্তুপীকৃত মানুষগুলির উপর মাটিচাপা দিতে নির্দেশ দেয়। পরবর্তীকালে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী অত্যাচার করতে সুযোগ পায়নি এই কারণে যে