পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՖՆ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড |լ Ֆ Գbr լ বনবিহারী সিংহ নওয়াপাড়া যশোর ১৯৭১ সালে ২৭শে মার্চে পাক বাহিনীর একটি দল সমস্ত বেরিকেড সরিয়ে চলে আসে নওয়াপাড়াতে। তারা জনসাধারণকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে এসে বেরিকেড উঠানোর কাজে লাগিয়ে দেয়। সেই সময় আমি সংবাদ পাই যে চেংগুটিয়া রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার সাহেবের নিকট হতে পাক বাহিনী নওয়াপাড়ার দিকে যাচ্ছে। এই সংবাদ পেয়ে আমি স্থানীয় জনসাধারণদের জানাই। তাঁরা নিরাপত্তার জন্য যে যতটুকু পেরেছে সাবধান হয়েছে। সেই সময় আমার ঘরে ছিলেন রুস্তম আলী সৰ্দ্দার (গার্ড ২৮ ডাউন এক্সপ্রেস), এস, এম, হক (গার্ড ৬৪ ডাউন প্যাসেঞ্জার), সালে আহম্মদ, নওয়াব আলী (চেকার), আইনুল হক (পোর্টার), ইমান আলী ও আব্দুল ওদুদ (পয়েন্টম্যান) গ্যাংসেট নবুশেখ গ্যাং, খালাসি শামছু। আমরা সবাই ডিউটিরত অবস্থায় ষ্টেশনে ছিলাম। কারণ এছাড়া জীবনের আর কোন নিরাপত্তা ছিলো না। আরা আমরা প্রকৃতপক্ষে কোন অন্যায় করিনি বলে জানতাম। এরপর হঠাৎ ঐ দিন অর্থাৎ ২৭শে মার্চ বেলা ১১টার সময় একদল পাক সেনা ষ্টেশনের অফিস কামরায় প্রবেশ করে। অফিসে প্রবেশ করে প্রথম চেয়ারে অবস্থানরত জনাব রুস্তম আলী সৰ্দ্দার সাহেব ও নওয়াব আলী সাহেবকে প্রথম হত্যা করে। আমি তাদের নিকটে ছিলাম। তারা হত্যা করেই ঘর হতে বের হয়ে গেল। কিন্তু পরক্ষণে পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে বলে যে, কে জীবিত আছো কাছো এসো। এখানে বলা প্রয়োজন যে, উক্ত দু’জনকে হত্যা করার পর ঘরে অবস্থিত অন্য সবাই বেঞ্চের নিচে আশ্রয় করার ফলে তাদের পাক বাহিনী কর্তৃক ব্রাশফায়ারে কোন ক্ষতি করতে পারেনি। কিন্তু পরক্ষণে ঢুকেই যখন তাদের সকলকে দাঁড়াতে বলে তখন আমি একটা আলমারির ও দেওয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে আত্বগোপন করে থাকি। দ্বিতীয়বার ঘরে প্রবেশ করে পাক বাহিনী জনাব সালে আহম্মদ ও জনাব এস, এম, হক সাহেবকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এবং আইনুল হক (পোর্টার) কে বাইরে বের করে গুলি করে কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে গুলিটি তার হাতে লাগে, ফলে জীবনে বেঁচে যায়। প্রায় ২ ঘণ্টা পর আব্দুর রব সাহেব (সহকারী ষ্টেশন মাষ্টার) আমার অফিস ঘরে এসে ডাক দেন আমার নাম ধরে এবং বলেন যে, পাক বাহিনী চলে গিয়েছে। তখন আমি উক্ত গোপন স্থান হতে আত্মপ্রকাশ এবং বাড়ী ফিরে এই দৃশ্যের কথা স্মরণ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এইভাবে কর্মরত ট্রেনের কর্মচারীবৃন্দকে তারা হত্যা করে। তবে যারা শহীদ হন তারা নওয়াপাড়া রেলওয়ে স্টাফ নন। তারা জড়ানো দুটো ট্রেনের গার্ড সাহেব ও চেকার সাহেব। ওয়াচম্যান জনাব আতর আলী সাহেবও শহীদ হন ঐ দিন। এই মৃত দেহগুলি প্রায় ৪/৫ দিন পড়ে থাকার দরুন পচে যায় কিন্তু সৎকারের ব্যবস্থা হয়নি এবং সাধারণ মানুষ করতে সাহস করেনি। পরে কয়েকজনকে সাথে করে আমি মৃতদেহগুলি সৎকারের ব্যবস্থা করি এবং কবরস্থ করি। পরে পাক বাহিনী নিজেদের দোষ চাপা দেবার জন্য বলে যে, ষ্টেশনে কে হত্যা করেছে তাদের ধরিয়ে দাও। তারা মানুষকে ভুল সংবাদ পরিবেশন করার চেষ্টা করে। এরপর মাঝে মাঝে আমি ষ্টেশনে আসতে থাকি এবং সাথে সাথে ঘরে চলে যাই। জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমি শ্ৰী যতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মহাশয়ের বাড়ীতে আশ্রয় করি। কিন্তু ১১ই এপ্রিল তারিখে একজন পাক