পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖՖէ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড থেকেই একটি বিরাট গর্ত খুড়ে রাখা হয়েছিল। লাশগুলো সেখানে নিয়ে এলো মাটি চাপা দেওয়ার জন্য। এই ৫ জনকেও সেখানে নিয়ে গেল। তারপর ঠিক গর্তের পারে তাদেরকে দাঁড় করিয়ে গুলি করলো। সবাই সাথে সাথেই লুটিয়ে পড়লো। শ্রী পরিমল গুহ বললেন ২৬শে মার্চ সকালের কথা। তিনি তখনো ম্যানহোলে। স্বচক্ষে দেখেছেন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, বীভৎস দৃশ্য। তিনি বলেছেন, এই ৫ জনের মধ্যে তিনি কালীরঞ্জন শীলকে চিনতে পেরেছেন। আর কাউকে চেনা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাদের একত্রে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ করার পর হানাদার খুনীরা সবাই চলে গেল গাড়ি হাঁকিয়ে। হয়ত তারা আরো শিকার ধরার জন্যেই গেল। মাঠের গর্তের পারে রইলো আগণিত প্রাণের নিঃপ্রাণ দেহ হঠাৎ এই মৃতের স্তুপ থেকে একজন লোক উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালাল। পরিমল গুহ বললেন, আমি স্পষ্ট দেখলাম এই ভাগ্যবান ব্যক্তি কালীরঞ্জন শীল। জনৈক ইঞ্জিনিয়ারের স্যালুলয়েড ক্যামেরায় যার ছবি ধরা পড়েছে তিনি কালীরঞ্জন শীল। তিনি আবার ২৬শে মার্চ ভোরের কথা বললেন। খুব ভোরে হানাদার সৈন্যরা অধ্যাপক অনুদ্বেপায়ন ভট্টাচার্যকে ধরে নিয়ে আসে মাঠে। শ্রী ভট্টাচর্য হলেন একজন হাউজ টিউটর। এসেম্বলী বিল্ডিংয়ের একটি কক্ষে থাকতেন। পরিমল গুহ দেখেছেন হলের ছাত্র বিধান রায় এবং অপর একজন লোককে তারা ধরে নিয়ে আসলো। শেষোক্ত ব্যাক্তির বেশভূষায় তাকে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী বলে মনে হলো। অধ্যাপক ভট্টাচার্যের পরনে ধুতি। তিনজনকে একত্র করা হলো। প্রহারের পালা। তারা তাদেরকে বুট দিয়ে লাথি দিচ্ছিল রাইফেলের বট দিয়ে মারছিল। বেদম প্রহর । তারা চিৎকার করছিলো, বিধান প্ৰহারের তীব্রভাবে সহ্য করতে না পেরে ছেড়ে দেবার কাকুতি করছিলেন। বার বার প্রার্থনা জানাচ্ছিলেন তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। বিধানের কথাতে তারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো। নরপশু সৈন্যরা প্ৰহারে তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দিল। অমানুষিক প্ৰহারের ফলে তারা যখন তিনজন প্রায় আধমরা হয়ে গিয়েছিলেন তখন তাদেরকে লাইন করে দাঁড় করানো হলো। তারপর সেই পরিচিত মেশিনগানের শব্দ। তারা তিনজন এলিয়ে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। পরিমল গুহ বললেন তিনি ২৬শে মার্চ মাঠে মানবতার পূজার প্রখ্যাত দার্শনিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যক্ষ ডক্টর গবিন্দ চন্দ্র দেবের মৃতদেহ দেখেছেন। তার গা খালি ছিল। সৈন্যরা তাঁকে উপুড় করে শুইয়ে রেখেছিল মাটি চাপা দেবার জন্য। -দৈনিক পূর্বদেশ, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ “জগন্নাথ হলের মাঠে ২৬শে মার্চের সকালে যে মর্মস্পশী দৃশ্য দেখেছি আমরা জানালা থেকে টেলিস্কোপ লাগিয়ে যিনি টেলিশিন ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন ২৫শে মার্চের হত্যাকাণ্ডের হৃদয়বিদারক দৃশ্য সেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎকৌশলের অধ্যাপক ডঃ নুরুল উল্লার সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকার।