পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'Eరి বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l মোঃ সাহেব আলী ঢাকা পৌরসভা, ঢাকা আমি ১৯৭১ সন থেকে ঢাকা পৌরসভার অধীনে সুইপার ইন্সপেক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ আমি আমার সুইপারের দল নিয়ে দায়িত্ব পালন করে সন্ধ্যায় ৪৫/১, প্রসন্ন পোদ্দার লেনস্থিত আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ীতে অবস্থান করছিলাম। রাত নয়টার দিকে আমি ঢাকা ইংলিশ রোডের দিকে বের হয়ে দেখলাম রাস্তাঘাট চারিদিকে থমথমে, সকল প্রকার যানবাহন দ্রুত গন্তব্যস্থলের দিকে যেতে দেখলাম। ছাত্র জনতাকে রাস্তায় বেরিকেড তৈরী করতে দেখলাম। প্রতিরোধ তৈরীতে ব্যস্ত ছাত্র জনতার নিকট আসছে। পাক পশুদের প্রতিরোধ করার জন্য ছাত্র জনতার এ প্রচেষ্টা ও প্রয়াস। আমি সবকিছু দেখে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে বাসায় চলে গেলাম। রাত সাড়ে এগারটার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, পুলিশ অফিস ও মালিবাগ, গোয়েন্দা অফিসের দিকে আকাশ ফাটা গোলাগুলির শব্দ শোনার সময় ঢাকা শাঁখারীবাজার প্রবেশ পথে বাবুবাজর ফাঁড়িতে ভীষণ শেলিংয়ের গৰ্জ্জন শুনলাম। আমি নিকটবর্তী নয়াবাজার সুইপার কলোনীর দোতলায় দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে গোলাগুলির ভীষণ গৰ্জ্জন শুনলাম। ২৬শে মার্চ অতি প্রত্যুষে আমি সুইপার কলোনীর দোতলা থেকে দৌড়ে নেমে বাবুবাজার ফাঁড়িতে ফাঁড়ির চারিদিকে দেওয়াল হাজারো গুলির আঘাতে ঝাঁঝড়া হয়ে আছে। দেওয়ালের চারিদিকে মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত, তাজা রক্ত জমাট হয়ে আছে, দেখলাম কেউ জিভ বের করে পড়ে আছে, কেউ হাত পা টানা দিয়ে আছে, প্রতিটি লাশের পবিত্র দেহে অসংখ্য গুলির আঘাত। মানবতার অবমাননা ও লাঞ্চনার বীভৎস দৃশ্য দেখে আমি একটি ঠেলাগাড়ীতে করে সকল লাশ ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে লাশ ঘরে রেখে আবার ঠেলাগাড়ী নিয়ে শাঁখারী বাজারে প্রবেশ করে একবারে পূর্বদিকে ঢাকা জজকোর্টের কোণে হোটেলের সংলগ্ন রাস্তায় দশটি ফকির মিসকিন ও রিকসার মেরামতকারী মিস্ত্রির উলঙ্গ ও অর্ধ উলঙ্গ লাশ উঠালাম। কোন হিন্দুর লাশ আমি রাস্তায় পাই নাই। সবকয়টি লাশ মুসলমানের ছিল। রাস্তায় পড়ে থাকা গুলিতে ঝাঁজড়া দশটি লাশ ঠেলাগাড়ীতে তুলে আমি মিটফোর্ড নিয়ে গিয়েছি। মুসলমানের লাশ এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেওয়া যায়না। তাই আমরা স্থানীয় জনতা সবাই মিলে লাশ গুলি তুলে মিটফোর্ডে জমা করেছি। রাজধানী ঢাকার সর্বত্র কার্ফ থাকা সত্ত্বেও গণহত্যার সেই বীভৎস দৃশ্য দেখার জন্য ছাত্র জনতা রাস্তায় রাস্তায় বের হয়ে পড়লে পাকসেনারা ঘোষণা করে ঢাকায় কার্ফ বলবৎ রয়েছে কেউ রাস্তায় বের হলে গুলি করা হবে। পাকসেনাদের এ ঘোষণার পর আমরা সরে পড়লাম। দিনের শেষে বেলা পাঁচটার সময় তাঁতিবাজার, শাঁখারী বাজার এবং কোর্ট হাউস ষ্ট্রিট এলাকায় পাক সেনারা আগুন ধরিয়ে দেয়। সাথে সাথে চলতে থাকে বৃষ্টির মত অবিরাম গুলি বর্ষণ। সারারাত পাক সেনারা তাঁতিবাজার, শাখারীবাজার ও গোয়াল নগর এলাকায় অবিরাম গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ১৯৭১ সনের ২৭শে মার্চ বেলা একটার সময় পাক সেনারা নওয়াবপুর থেকে ইংলিশ রোডের বাণিজ্য এলাকার রাস্তার দুদিকের সকল দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। বেলা তিনটা পর্যন্ত ইংলিশ রোডের রাস্তার দুদিকে আগুন জুলতে থাকে। আগুনের সেই লেলিহান শিখায় পার্শ্ববর্তী এলাকার জনতা আশ্রয়ের জন্য পালাতে থাকে। পালাতে গিয়ে