পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8の বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l 〉と l পরদেশী সুইপার সরকারী পশু হাসপাতাল ঢাকা ১৯৭১ সনের ২৭শে মার্চ সকালে রাজধানী ঢাকায় পাকসেনাদের বীভৎস হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর সালামত আলি খান শূরের প্রশাসনিক অফিসার মিঃ ইদ্রিস পৌরসভার আরও কয়েকজন অফিসার সঙ্গে নিয়ে একটি মিউনিসিপ্যাল ট্রাকে পশু হাসপাতালের গেটে এসে বের হয়ে আসি। ইদ্রিস সাহেব অত্যন্ত ক্রদ্ধভাবে কর্কশ স্বরে বলতে থাকেন, “তোমরা সব সুইপার ডোম বের হও, যদি বাঁচতে চাও অবিলম্বে সবাই মিলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় স্তুপীকৃত লাশ উঠিয়ে ধলপুর ময়লা ডিপোতে ফেলে দাও। নইলে কাউকে বাঁচানো হবে না, কেউ বাঁচতে পারবে না।” পৌরসভার সেই ট্রাকে নিম্নবর্ণিত সুইপাররা বসা ছিলঃ ১ ভারত ২ লাড়ু ৩ কিষণ। আমি তার নির্দেশ অমান্য করার কোন উপায় না দেখে ট্রাকে উঠে বসলাম। সেই ট্রাকে করে ঢাকা পৌরসভা অফিসে আমাদের প্রায় আঠারজন সুইপার ও ডোমকে একত্রিত করে প্রতি ছয়জনের সাথে দুইজন করে সুইপার ইন্সপেক্টর আমাদের সুপারভাইজার নিয়োজিত করে তিন ট্রাকে তিনদলকে বাংলাবাজার, মিটফোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রেরণ করা হয়। আমি মিটফোর্ডের ট্রাকে ছিলাম। সকাল নয়টার সময় ভিতরে প্রবেশ করে বুকে এবং পিঠে মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা করা প্রায় একশত যুবক বাঙ্গালীর বিভৎস লাশ দেখলাম। আমি আমার সুপারভাইজারের নির্দেশে লাশঘরের ভিতরে প্রবেশ করে প্রতিটি লাশর পায়ে দেখেছি প্রতিটি লাশের বুক ও পিঠ মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা সব লাশ তুলে দিয়ে একপাশে একটা লম্বা টেবিলের উপর চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া একটি লাশের উপর থেকে চাদর টেনে উঠিয়ে দেখলাম একটি রুপসী ষোড়শী যুবতীর উলঙ্গ লাশ-লাশের বক্ষ, যোনিপথ ক্ষতবিক্ষত, কোমরের পিছনের মাংস কেটে তুলে নেওয়া হয়েছে, বুকের স্তন থেতলে গেছে, কোমর পর্যন্ত লম্বা কালো চুল, হরিণের মত মায়ময় চোখ দেখে আমার চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকলো, আমি কিছুতেই চোখের পানি রাখতে পারলাম না। আমি আমার সুপারভাইজারের ভয়াল এবং ভয়ঙ্কর কর্কশ গর্জনের মুখে সেই সুন্দরীর পবিত্র দেহ অত্যন্ত যত্ন সন্ত্রমের সাথে নিয়ে গিয়ে বিরাট গর্তের মধ্যে ঢেলে দিলাম। দেখলাম বিরাট গর্তের মধ্যে সুইপার ও ডোমেরা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা লাশ ট্রাক থেকে গর্তের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। আমি অধিকাংশ লাশের দেহে কোন কাপড় দেখি নাই, যে সমস্ত যুবতী মেয়ে ও রমণীদের লাশ গর্তের মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো তার কোন লাশের দেহইে আমি কোন আবরণ দেখি নাই। তাদের পবিত্র দেহ দেখেছি ক্ষতবিক্ষত, তাদের যোনিপথ পিছন দকিসহ আঘাতে বীভৎস হয়ে আছে। দুপুর প্রায় দু’টার সময় আমরা রমনা কালীবাড়ীতে চলে আসি পেীসভার ট্রাক নিয়ে। লাশ উঠাবার জন্য ট্রাক রমনা কালীবাড়ীর দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে, দুজন ট্রাকে দাঁড় ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় ছাড়ানো ছিটানো ৪১টি পোড়া লাশ আমি ট্রাকে তুলেছি। কালীবাড়ীর এ সকল লাশ আমরা ধলপুরের ময়লার ডিপোতে গর্তের মধ্যে ফেলেছি। লাশ তুলে তুলে মানুষের পচা চর্বির গন্ধে আমার পকস্থলী বের হতে চাচ্ছিল। পরের দিন আমি আর লাশ তুলতে যাই