বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৫২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

503 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড আবার যেখানে জনগণের কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাওয়া যায় না সেখানে গেরিলাদের কঠোর হতে হবে, সেখানে ব্যাপক সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি করতে হবে সারা দেশজুড়ে । এই সন্ত্রাসবাদের ফলে বিভিন্ন দিক থেকে অনেক অনেক কাজ পাওয়া যায়। প্রথমতঃ জনগণ না চাইলেও ভয়ে সমর্থন করে গেরিলাদের। দ্বিতীয়তঃ শত্ররা সস্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তৃতীয়তঃ দলীয় সংগঠনের ভিত্তিও পাকা হয়। কারন দলের লোকেরাও তত বেশী করে আনুগত হয় তাদের নেতার উপরে। ভয়ে কেউ দল ছেড়ে যায় না, কারণ তারা জানে এর পরিণাম হবে মৃত্যু। গেরিলারা কাউকে ক্ষমা করে না যখন কেউ অন্দোলনের ক্ষতি করে। তবে নেতার দেখতে হবে যত কম সন্ত্রাস সৃষ্টি করে স্থানীয় সমর্থন পাওয়া যায়, তত ভাল, তার জন্য নেতাকে তাদের কথা ভালভাবে জনগণকে বুঝিয়ে দিতে হবে, যে তারা জনগণের মুক্তির জন্যই যুদ্ধে নেমেছেন এবং তাতে তারা প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। এটা যখন জনগণ বুঝতে পাবে, তখনই তারা গেরিলাদের নিজেদের মত দেখবে ওদ তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। গণসমর্থন যদি ব্যাপক ও প্রবল থাকে গেরিলাদের পিছনে তাহলে তাদের কাজ অনেক সহজ হয়, গণসমর্থনের ফলে তাদের রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক দুটো জোরালো হয়ে ওঠে। এক মহৎ রাজনৈতিক আদর্শ ও উদ্দেশ্যে বলীয়ান হয়ে তারা যুদ্ধ করে। তাদের আত্মত্যাগ সহজ হয়ে ওঠে, প্রচুর পরিমাণে তারা আত্মশক্তি খুঁজে পায়। তারা ভাবে, আমরা একা নই। আমাদের পেছনে আছে আরও অগণিত মানুষ। যুদ্ধে অস্ত্র চাই ঠিক, কিন্তু অস্ত্রই সব কথা নয়, শুধু অস্ত্র দিয়েই যুদ্ধ জেতা যায় না। যুদ্ধ করে মানুষ। যুদ্ধের জন্য চাই ব্যাপক গণসমর্থন জনগণের সহানুভূতিশীল মন। সুতরাং শত্রদের জমকালো অস্ত্ৰ-শস্ত্র ও সৈন্যসংখ্যা দেখে ঘাবড়ে গেলে চলবে না। কোন যুদ্ধের ক্ষেত্রে কার কত সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি আছে তা শুধু দেখলে চলবে না দেখতে হবে কোন পক্ষে কত লোকবল আছে আর দেখতে হবে সেই সব লোকের মনোবল কতখানি। গেরিলা নীতি হলো বিকল্প নীতি। বন্দুকের পরিবর্তে প্রচার চাই। বিমানের পরিবর্তে চাই বিধ্বংসী ক্রিয়া, অস্ত্র শিল্পের পরিবর্তে চাই রাজনৈতিক শিক্ষা এবং মেশিনের পরিবর্তে মানুষ। গেরিলা শুধু যুদ্ধের খাতিরেই যুদ্ধ করবে না, সঙ্গে তারা জনগণকে অনুপ্রানিত করবে, সংগঠিত করবে সশস্ত্র করে তুলবে এবং বৈপ্লবিক রাজনৈতিক শক্তির প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করবে। সুবন্দোবস্ত করবে। তাদের দুঃখ দূর করার চেষ্টা করবে, যুদ্ধের প্রথম স্তরে যত কম সম্ভব ধনীদের বিরক্ত করবে। নৈকট্য গেরিলা যুদ্ধের নৈকট্য বলতে বোঝায় ভৌগোলিক ও মনস্তাত্ত্বিক নৈকট্য এটা হল গেরিলা বাহিনী ও শত্রসৈন্যের মধ্যে নৈকট্য। গেরিলা ও স্থানীয জনগণের নৈকট্য। এই নৈকট্য গেরিলা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ও পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রিত করে। কর্মবিভাগ এই বাহিনীর কর্মবিভাগ ও সংগঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অনেক কষ্ট করে গেরিলা বাহিনীকে গড়ে তুলতে হয় এবং এর গঠন পদ্ধতি বড়ই জটিল। সাধারণতঃ দুই ধরনের লোক এই বাহিনীতে থাকেঃ একদল সবসময়ের জন্য যুদ্ধ করে আর একদল কিছু সময়ের জন্য লড়াই করে। পুরো গেরিলা-যারা সমাজজীবন একেবারে ত্যাগ করে বনে জঙ্গলে পাহাড়ে গেরিলা বাহিনীর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে হাতে কলমে যুদ্ধ শিখে। তাদের নীতি ও আদর্শে দীক্ষিত হতে হয়। আধা গেরিলা- আংশিক গেরিলারা ট্রেনিং করার পরে সাধারণ জীবনযাপন করে এবং দরকার হলেই তারা যুদ্ধে নেমে পড়ে। এরা গেরিলা বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে।