বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



695

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের গোড়ার দিকে মুক্তিবাহিনীর সাথে হানাদার সেনিাদের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে রাজাকারসহ প্রায় দু’শ পাকিস্তানী সৈন্য খতম হয়েছে।

 মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা অঞ্চলে শত্রুপক্ষের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বাঙ্কার উড়িয়ে দেন এবং প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাগুলী উদ্ধার করেন। মুক্তিবাহিনী গ্রামাঞ্চলে সৈন্যবাহিনীর সরবরাহ লাইনটি সাফল্যের সঙ্গে বানচাল করে দিয়েছেন।

রাজাকারেরা দলে দলে ধরা দিচ্ছে

 হানাদার খান সেনারা মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা প্রতিহত করার জন্য লুটপাটের লোভ দেখিয়ে মাত্র দু’সপ্তাহের ট্রেনিং দিয়ে যে রাজাকার দল গঠন করেছিল তারা এখন প্রতিদিন দলবদ্ধভাবে আমাদের মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করছে।

 গত ১৬ই সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার বাবলাচড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান তার অধীনে ২২ জন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছে। সেই সঙ্গে উক্ত দলটি তাদের কাছে রক্ষিত সমস্ত রসদসহ রাইফেল, হাল্কা মেশিনগান, শটগান, ষ্টেনগান প্রভৃতি বিপুল অস্ত্রশস্ত্রও মুক্তিবাহিনীর হাতে তুলে দেয়।

 এ ধরনের বেশ কয়েকটি রাজাকার দল মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা দিয়েছে। একমাত্র খুলনা জেলাতেই এ ধরনের দলত্যাগীর সংখ্যা ৬০। তারা তাদের সব অস্ত্রশস্ত্রসমেত মুক্তিবাহিনীতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। 

-জয়বাংলা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

রণাঙ্গন থেকে

 মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর হইতে প্রচারিত বুলেটিনে প্রকাশ, গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে কয়েকশত হানাদার সৈন্য খতম হইয়াছে। বিশেষত সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে গেরিলাদের অবিরাম তৎপরতায় হানাদারদের নাভিশ্বাস উঠিয়াছে।

 গত সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা মাইনের সাহায্যে বুড়িচং-এর কাছে ৩০ জন শত্রুসৈন্যকে খম করে।

 চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী গত ২৭শে সেপ্টেম্বর রাঙামাটি থানা ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র আক্রমণ করে ও থানার অস্ত্রশস্ত্র দখল করে।

 সিলেট রণাঙ্গনে গত সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী সুরমা নদীতে শত্রুপক্ষের দুইটি স্পীডবোট ধ্বংস করে। মুক্তি বাহিনী মাইনের সাহায্যে সিলেট শহরে একটি পাওয়ার সাব স্টেশন উড়াইয়া দেয় ও কয়েকটি সামরিক গাড়ি ধ্বংস করে। রাধানগর, জয়ন্তিয়াপুর, জাফলং, নুমাগহজ ও সুরমা নদীপতে কয়েকটি তৎপরতায় গেরিলারা কমপক্ষে ৪০ জন পাক সেনা ও রাজাকারকে হত্যা করে।

 গত সপ্তাহে ময়মনসিংহ জেলার বিরিসিরি, বিজয়পুর, বন্দর কাটা ও শেরপুর এলাকায় ৯ জন শক্র সৈন্য খতম হয়।

 মুক্তিবাহিনী এই জেলায় ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব পাড়ে রাহুমারি ও মীরগঞ্জ এলাকায় নিজেদের দৃঢ় কর্তৃত্ব স্থাপন করিয়াছে।

 গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন অভিযানে মুক্তিবাহিনী নোয়াখালীর ছাগলনাইয়ায় ৫ জন, মনোহরপুর আজমপুর ও জামবাড়িতে ২০ জন, কোটেশ্বরে ৩ জন ও ছদিয়া গ্রামে ১২ জনসহ বহুসংখ্যক শত্রু সৈন্যকে খতম ও আহত করিয়াছে।