বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



697

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

দোকানের মালিক পাক বাহিনীকে তাদের বর্বর হামলার সবসময়ই মদদ যোগাতো। মুক্তিবাহিনী ঐ দোকানের প্রচুর ক্ষতি সাধন করেন এবং বহু রাজাকরকে হত্যা করেন।

 গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলার চক্রমারী এলাকায় পাক হানাদার ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে প্রচুর গোলা বিনিময় হয়। তাতে ৫ জন পাক সৈন্য নিহত হয়।

 ঐ একই দিনে বাওল্লী এলাকায় পাক হানাদারদের সঙ্গে অন্য এক সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা আরও ছয়জন শত্রুসৈন্য খতম করেন।

 ১৮ই সেপ্টেম্বর শক্রকবলিত ফারসীপাড়া এলাকায় গুলি বিনিময়ের সময় আরও ছ’জন পাক সৈন্য নিহত হয়। ঐ একই দিনে লাহিড়ি এলাকায় শক্রসেনাদের উপর সাঁড়াশি আক্রমন চালানো হয়। ঐ আক্রমণে আরো দু’জন পাক সৈন্য নিহত হয়। ১৯শে সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী দিবর এলাকায় শত্রদের ঘিরে ফেলেন ও বিপুলসংখ্যক পাক সৈন্যকে খতম করেন। খান্দখাই এলাকায়ও মুক্তিবাহিনী পাকফৌজের উপর প্রবল আক্রমণ চালান। এই আক্রমণে তিনজন শক্রসেনা আহত হয় বলে জানা যায়।

 ১৯শে সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার নাগেশ্বরী ও ভোতিমারি এলাকায়া বেশ কয়েকটি সফল আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা রেলপথ, সেতু ও কালভার্ট উড়িয়ে দিয়ে ঐ এলাকার রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।

 তাছাড়া মুক্তি বাহিনী রংপুর জেলার ভুরুঙ্গামারী, মহেন্দ্রনগর, নাগেশ্বরী ও লালমনিরহাট এলাকায় ব্যাপক গেরিরা তৎপরতা চালিয়েছেন।

 ঢাকা কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সেক্টর থেকে যুদ্ধের যে খবর পাওয়া গেছে তাতে জানা যায়, গত ১৩ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার আড়িয়া বাড়িতে দু’জন পাক সৈন্যকে হত্যা করেছে। পরদিন অর্থাৎ ১৪ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কসবায় শত্রুসৈন্যের অবস্থানের উপর প্রবল গোলাবর্ষণ করে আরো ২ জন শত্রুসৈন্য খতম করেন। ১৬ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পানচারায় দু’জন হানাদার সৈন্যকে হত্যা করেন।

 ১৭ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী বেশ কতকগুলো আক্রমন পরিচালনা করেন। লোহইমারি ও যদিসার এলাকায় পাকফৌজের সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী তিনজন শত্রু সৈন্য খতম করেছেন। তাছাড়া ঐ একই দিনে মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার মোটেশ্বর, হাশমঙ্গল ও চলন এলাকায় পাক বাহিনীর অবস্থানকে সম্পূর্ন ঘিরে ফেলে প্রচুর গোলাবর্ষন করেন। এতে ৬ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় বলে জানা যায়।

 ময়মনসিংহ সেক্টরে মুক্তিবাহিনী গত ১৫ই সেপ্টেম্বর সিলেটের শ্রীমঙ্গলে একটি পাকিস্তানি সামরিক জীপকে উড়িয়ে দিয়েছেন। মাইন বিস্ফোরনের দরুনই জীপটি সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস হয়ে যায়। গত ১৭ই সেপ্টেম্বর মুক্তি বাহিনী নওকুচি এলাকায় মাইন পুতে রাখলে সেটি বিস্ফোরণের ফলে একজন পাক সৈন্য নিহত এবং অপর একজন আহত হয়। ২০ সেপ্টেম্বর সিলেটের ছড়িপাড়া এবং বেয়িগাঁও এলাকায় অসমসাহসী আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ২০ জন শত্রকে খতম করেছেন।

 নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া এক খবরে প্রকাশ প্রায় ৪০ জন কানকাটা রাজাকারকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শক্র সৈন্যকে সাহায্য ও সহোযোগিতা করার জন্যে গ্রাম বাংলার জনগণ রাজাকারদের এই দিয়েছেন।

 কুষ্টিয়া যশোর খুলনা সেক্টর থেকে পাওয়া এক খবরে জানা যায় যে, মুক্তিবাহিনী গত ১৯ শে সেপ্টেম্বর যশোরের কামদেবপুর এলাকায় একজন পাক সৈন্যকে খতম করেছেন। তাছাড়া ২০ শে সেপ্টেম্বর মানিকনগর এলাকায় প্রায় দুই কোম্পানী শত্রু সৈন্যের সাথে গোলা বিনিময়ের সময় মুক্তিবাহিনী আরো দু’জন শত্রু সৈন্যকেও খতম করেছেন। 

-দাবানল, ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১