বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
702

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

মুক্তিবাহিনীর দুর্বার অভিযান অব্যাহত

(নিজস্ব সংবাদাদাতা)

পালংয়ে শত্রঘাঁটি বিধ্বস্ত

 গত মাসে ফরিদপুরে একটি দুঃসাহসিক অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা উল্লেখযোগ্য সাফল্যলাভ করিয়াছে। মাদারীপুরের পালং থানায় পাকিস্থানী মিলিটারি পুলিশ ও রাজাকারদের একটি শত্রু ঘাঁটি মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়।

 ঐ ঘাটিতে ৭০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ও কিছুসংখ্যক রাজাকার ছিল। মধ্য রাত্রিতে মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক হইতে থানাটি আক্রমণ করে এবং আট ঘণ্টা তুমুল লড়াইয়ের পর শক্ররা প্রায় সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়। ৬৮ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ও রাজাকার খতম হয়। মুক্তিযোদ্ধারা থানাটি ভাঙিয়া পুনরায় ঘাটি স্থাপনের অযোগ্য করিয়া ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা এখানে ৫টি চীনা অটোমেটিকসহ ৬০ টি রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এই বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে দুই জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হইয়াছেন।

 আর একটি খবরে প্রকাশ, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার কাছে দুইটি পাট বোঝাই ফ্ল্যাট মুক্তিবাহিনী দখল করিয়াছে। ইহার প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য বর্বর হানাদার বাহিনী ৯টি লঞ্চের এক বহর লইয়া কোটালিপাড়া বিলে যায় এবং ডহরপাড়া, মদনপাড়, পশ্চিমপাড়, প্রভৃতি গ্রামে আগুন লাগায়। কলাবাড়ী গ্রামে জল্লাদরা ২২ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। মুক্তি

  মুক্তি বাহিনী সম্প্রতি মনিকদহ গ্রামের দালাল আসাদ বিশ্বাসকে খতম করিয়াছে।

মানিকগঞ্জে বিরাট সাফল্য

 গত ২৩শে সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানায় এক অভিযান চালাইয়া মুক্তিযোদ্ধারা ৭৫ জন পুলিশ ও রাজাকারকে বন্দী ও বিপুল পরিমান অস্ত্র দখল করিয়াছে। কিছুদিন যাবতুএিই থানার ঘাটি হইতে পুলিশ ও রাজাকাররা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির উপর নির্যাতন চালাইয়া আসিতেছিল।

 ঘটনার দিন মধ্য রাত্রিতে দুই দিক হইতে থানাটির উপর আক্রমণ করিলে শত্রপক্ষ কিছুক্ষণ গোলাগুলি ছোড়ে। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যে পুলিশদের অনেকে চম্পট দিয়া আত্মরক্ষা করে আর যুদ্ধক্ষেত্রে নাবালক রাজাকাররা প্রায় সকলেই ধরা পড়ে।

 এখানে মুক্তিবাহিনী প্রায় শখানেক রাইফেল, ৫টি অটোমেটিক চীনা রাইফেল ও ১০ হাজার রাউণ্ড গুলি দখল করিয়াছে।

 গত ২১শে সেপ্টেম্বর হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যরা হরিরামপুর থানার বল্লা গ্রামে লুটপাট করিতে আসিলে মুক্তিবাহিনীর হাতে দুইজন খতম হয়। কিন্তু হানাদার বর্বরেরা কাপুষের মত ইহার প্রতিশোধ নেয় নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের উপর। বল্লা, মাচাইন ও পাশ্ববর্তী গ্রামে ইহারা ১৬ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে।

 মুক্তিবাহিনী এই এলাকার কুখ্যাত দালাল মুসলিম লীগের আহমদ খাঁকে খতম করিয়াছে।

নারায়নগঞ্জ

 বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়াছে, মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা-নারায়নগঞ্জ সড়কের নলখালি ব্রীজ মাইন দিয়া উড়াইয়া দিয়াছে।

 রূপগঞ্জ থানার দড়িপাড়ায় পাক দখলদার বাহিনীর ক্যাম্পে গ্রেনেড চার্জ করিয়া মুক্তিবাহিনী ৪ জন শত্রুসেনা খতম করিয়াছে।