বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



770

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 মিত্র বাহিনীর চীফ-অব-ষ্টাফ জেনারেল ম্যানেকশ অধিকৃত বাংলাদেশের পাক সামরিক প্রধান লেঃ জেনারেল নিয়াজীকে তার লোকজন ও অস্ত্রসস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করার জন্য আহবান জানাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, অনিবার্য মৃত্যুর হাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্যে আত্মসমর্পণই সর্বোত্তম পথ।

 লড়াই এখনও চলছে: ১৪ ডিসেম্বর। ময়মনসিংহ থেকে পলাতক পাকসেনাদের একটি দল জামালপুর হয়ে মধুপুর গড়ে প্রবেশ করে এবং টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার মধ্যবর্তী বন এলাকা দিয়ে ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কালিহাতী থানার কালিয়া ইউনিয়নের রক্ষীবাহিনী খবর পেয়ে দলটিকে অনুসরণ করে। কচুয়ার দক্ষিণ পূর্বে একটি বনে এদের গতিরোধ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। মেজর আফসারের ফৌজেরা সিগন্যাল মারফত সংবাদ পেয়ে পাকসেনাদের ঘিরে ফেলেন ও তাদের আত্মসমর্পণ করাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু বর্বরদের দলটি তা না করে দক্ষিণ দিকে যেতে থাকে। সেদিকে অবরুদ্ধ হলে তারা পূর্বদিকে মোড় নেয়, এবং সুবিধাজনক জায়গা পেলেই গুলি ছুড়তে থাকে। ১৫ তারিখ এ খবর লেখা পর্যন্ত তারা একই পন্থা অবলম্বন করে চলছে। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৪৮ জন ও ধরা পড়েছে ৩ জন- বন্দীদের মধ্যে কয়েকজন গুরুত্তরূপে আহত। এরা সকলেই পাঞ্জাব রেজিমেণ্টের সৈন্য।

 আমাদেরও ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন মেজর আফসারের তৃতীয় পুত্র নাজিম উদ্দীন আহমেদ। অন্যান্যরা হলেন নাজিম উদ্দীন, আবদুল খালেক, আবুল কাসেম ও বসির উদ্দিন। এছাড়াও রক্ষীবাহিনীর একজন আহত ও ৩ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৫ তারিখ থেকে মেজর আফসার নিজে এ যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। পাকসেনাদের প্রতি বারবার আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও তারা এখনও অস্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

 কালিয়াকৈর সংঘর্ষ: ১৪ই ডিসেম্বর, কালিয়াকৈর টাঙ্গাইল মুক্ত করার পর যখন মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী ঢাকা অভিমুখে তাদের ত্রিমুখী অভিযান শুরু করেন, ঠিক তখনই প্রায় ৬০০ জন হানাদার পাকসেনা ঢাকার সেনানিবাস হতে বেরিয়ে এসে কালিয়াকৈর বন এলাকায় ঢুকে পড়ে। টের পেয়ে আমাদের মুক্তিবাহিনীর হাবিলদার হাকিমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা এদের সাথে এক প্রচণ্ড সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। শত্ররা এ সংঘর্ষের সামনে টিকতে না পেরে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে।মুক্তিযোদ্ধারা সুযোগ মত চরম আঘাত হানার জন্য হানাদারদের অনুসারণ করে চলেছে।

 ঢাকার পথে: ১৫ই ডিসেম্বর। মেজর আফসারের এক দল বীর গেরিলা যোদ্ধা ঢাকা আক্রমণ অভিযানে অংশগ্রহণ করার জন্য গতকাল ঢাকার পথে যাত্রা শুরু করেছেন।

 নিয়াজীর আর্তনাদ: ১৫ই ডিসেম্বর। ঢাকা শহরকে উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর বীরযোদ্ধারা অক্টোপাশের ন্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছেন। জানা গেছে যে, তাঁরা ভারী অস্ত্রশস্ত্রে অতি সুসজ্জিত, এবং ঢাকা শহরের সামরিক লক্ষ্যস্থলসমূহ তাঁদের কামানের আওতায় এসে গেছে।

 এ পরিপ্রেক্ষিতে পাকসেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রধান লেঃ জেঃ এ এ কে নিয়াজী ত্রাহি ডাক ছেড়েছেন। নির্বিচারে গণহত্যার এ পুরোহিতটি ভারতীয় বাহিনীর চীফ-অব-ষ্টাফকে অনুরোধ জানিয়েছেন। যুদ্ধবিরতির জন্যে। জেনারেল ম্যানেকশ তার আবেদন মঞ্জুর করে কাল সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ যুদ্ধ বিরতি দিয়েছেন। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিয়াজীকে জানাতে হবে তিনি তার লোকজনসহ আত্মসমর্পণ করতে সম্মত কি-না। অন্যথায় উক্ত সময় অতিক্রম করার সাথে সাথেই ...।



-জাগ্রত বাংলা, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
* * * * *