পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/১০১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

980 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম উৎস তারিখ ৪২০ নিয়াজির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ যুগান্তর ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ নয়াদিল্লী, ১৬ ডিসেম্বর (ইউ এন আই)- পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী আজ বিনাশর্তে মুক্তিবাহিনীর সহযোগী ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ পূর্ণ মুক্তি লাভ করলো আত্মসমর্পণের নথিপত্র স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ পাক বাহিনীর প্রধান লেঃ জেঃ নিয়াজী এবং ভারতীয় ইস্টার্ণ কমান্ডের জি ও সি ইন সি লেঃ জেঃ জগজিৎ সিং অরোরা। লেঃ জেঃ অরোরা এই উদ্দেশ্যে আজ দুপুরে বিমানযোগে বাংলাদেশের রাজধানীতে গিয়েছিলেন। বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে এই নথি স্বাক্ষরিত হয়। পাক দখলকার বাহিনীরা বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের কথা প্রধাণমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধী লোক সভায় ঘোষণা করেন এবং রাজ্যসভায় এই কথা ঘোষণা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রী জগজীবন রাম। বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময় উভয় কক্ষে একই সঙ্গে এই ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই উভয় কক্ষ উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং নির্দিষ্ট সময়সূচীর বাইরেও তাঁরা অধিবেশন চালিয়ে যান। আত্মসমর্পণের ব্যাপারে সমস্ত ব্যবস্থা করেন ইষ্টাৰ্ণ কমান্ডের চীফ অব ষ্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জেকব। আমাদের সৈন্যাধ্যক্ষ জেনারেল মানেকশ'র চরমপত্র অনুযায়ী আজ সকলা নটার পরেই জেনারেল নিয়াজী বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের কথা জানান। সকাল ন’টার দশ মিনিট পূর্বে জেনারেল নিয়াজীর বার্তা এসে পৌঁছায়। আত্মসমর্পণের শর্ত পাকিস্তানী বাহিনীর লেঃ জেঃ নিয়াজী ভারতীয় বাহিনীর লেঃ জেঃ অরোরার কাছে প্রদত্ত যে আত্মসমর্পণপত্রে স্বাক্ষর করেন তাতে আছে, এতদ্বারা পূর্বাঞ্চলের ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জি ও জি ইন সি লেঃ জেনারেল অরোরার কাছে পাক বাহিনীর ইষ্টাৰ্ণ কমান্ড বাংলাদেশস্থিত সমস্ত পাকিস্তানী সশস্ত্র সৈন্যের আত্মসমর্পণের কথা স্বীকার করছে। আত্মসমর্পণ যারা করেছে তাদের মধ্যে আছে পাকিস্তানী স্থল, বিমান নৌবাহিনীসহ প্যারামিলিটারী বাহিনী ও অসামরিক সশস্ত্রবাহিনীর সমস্ত সৈনিক। এই সমস্ত বাহিনীর সৈনিকেরা যে যেখানে আছে সেখানকার লেঃ জেনারেল অরোরার অধীনস্থ সৈন্যবাহিনীর কাছে অস্ত্র ও আত্মসমর্পণ করবে। এই নথি স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানী ইষ্টাৰ্ণ কমান্ড লেঃ জেনারেল অরোরার অধীন হয়ে যাবে। এই আদেশ যে অবজ্ঞা করবে তাকে আত্মসমর্পণ শর্তের পরিপন্থী বলে মনে করা হবে এবং যুদ্ধের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আত্মসমর্পণ শর্তাবলী সম্পর্কে কোন সন্দেহ দেখা দিলে লেঃ জেনারেল অরোরা সে বিষয়ে যে ব্যাখা করবেন তাকেই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করা হবে। লেঃ জেনারেল অরোরা এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, যেসব সৈন্য আত্মসমর্পণ করবে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে জেনেভা চুক্তির শর্তানুযায়ী সম্মান ও মর্যাদামুক্ত ব্যবহার করা হবে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে।