পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড কাশ্মীরের আধাসৈন্য প্রায় ৩০ হাজার। এছাড়া আছে স্কাউট, রেঞ্জার ইত্যাদি অনিয়মিত কিন্তু মোটামুটি দক্ষ সৈন্য আর ৪০/৫০ হাজারের মত। অস্ত্রশস্ত্রে ঐ ২৭০০০০ সৈন্য বেশ আধুনিক, বাকীরা সেকেলে। মার্কিন বদান্যতায় পাওয়া এবং ১৯৬৫'র ক্ষয়ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া ৪০০ মাঝারি ট্যাঙ্ক এবং রাশিয়া ও চীন থেকে পাওয়া ৩০০-এর মত মাঝারি ট্যাঙ্ক আছে। হাল্কা ট্যাঙ্ক (মার্কিন ও চীনা) এবং উভচর ট্যাঙ্ক (রাশিয়ান পিটি-৭৬) মিলেও আরও ২০০-এর মত হতে পারে। কামান বেশীর ভাগই পুরানো ২৫ পাউন্ডার হলেও অল্পসংখ্যক মার্কিন ও রুশ খুব ভারী কামান ও ভালোজাতের চীনা মর্টার ও রকেটও আছে। পূর্ব বাংলায় কিন্তু এই বাহিনীর সাত ভাগের এক ভাগও ছিল না ২৫শে মার্চ এবং তার পরের একমাসে- বিদেশীদের মতে আরও ১০/১২ হাজার সৈন্য আমদানি করা হয় জাহাজ ও বিমান পথে। আর ছিল ২০/২২ খানার মত পুরাতন স্যাবর জেট বিমান। অল্পসংখ্যক হেলিকপ্টার, গানশিপ ও ছিল পূর্ব বাংলায়। আওয়ামী লীগের “রেগ-টেগ সার্কাস” -এর তুলনায় ৩০/৪০ হাজার নিয়মিত সৈন্য এবং তাছাড়া ৪০ তাংশ লেজুড় যথেষ্ট শক্তিশালী এ কথা বলাই বাহুল্য। ইপিআর- এর কোন রণসম্ভাই এই বাহিনীর বা স্যাবর জেটগুলির মোকাবিলা করবার পক্ষে উপযুক্ত নয়। সুতরাং ফল যা হওয়ার হয়েছে। (৩) ভারতের শোচনীয় ব্যর্থতার ইতিহাস বড়ই করুণ। এমন সুবর্ণ সুযোগ যে দেশ গ্রহণ করতে না পারে সে দেশের নেতৃত্ব ক্ষমার অযোগ্য। পাকিস্তান ভারতের শত্রদেশ। ১৯৬৫ সালের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, কোন প্রকার কূটনৈতিক সৌজন্যে প্রদর্শনও হয় না। পাকিস্তানের একমাত্র কাম্য হল ভারতের সর্বনাশ হোক। যেনতের প্রকারে ভারত সামরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল হোক। নাগা মিজো তামিলরা বলুক যে আমরা ভারতের মধ্যে থাকবো না। চীন ও ভারত এশিয়ার এই দুইটি প্রধান শক্তি পরম্পর শত্রতার মধ্যে কালযাপন করুক- পাকিস্তান এই চায়। তার বিনিময়ে ভারত ক্রমাগত চাইছে যে, পাকিস্তান আমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করুক। ভদ্র আচরণ করুক ইত্যাদি। এর চেয়ে হাস্যকর মূর্খতা আর কি হতে পারে। জার্মানীর মদগৰ্বী প্রাশিয়ান জাঙ্কারদের মত সৌর্যবীর্যগবী পাঞ্জাবী আফ্রিদি বেলুচরাও ভাবে যে ভারত আমাদের কি ক্ষতি করতে? আমাদের সহায় চীন, তুরস্ক, ইরান, সৌদি আরব এবং লিবিয়া- এই শেষোক্ত দেশ দুটি তেল বিক্রির টাকার একটা বড় অংশ যেমন ইসরাইলীদের বিরোধী আরবরা পাচ্ছে তেমন এর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পাচ্ছে হিন্দু বিরোধীর ভূমিকায় পাকিস্তান। সামরিক শক্তির দিক থেকে একমাত্র চীন শক্তিমান। তুরস্ক ও ইরানের কিছু আধুনিক রণসম্ভার আছে কিন্তু সাহায্য দেওয়ার মত কিছু না। ষ্টেইটম্যান (১২ মে) এ ক্লদীপ নায়ার লিখেছেন যে ইরান ও তুরস্ক পাকিস্তানকে এফ-৫ এবং এফ-৮২ বিমান দিয়েছে। অদ্ভুদ কথা। ঐ এফ-৫ মার্কিনরা ১৯৬২ সালে ভারতকে দিতে চেয়েছিল। ভারত নিতে রাজী হয়নি। মান্ধাতার আমলের এফ-৮২ (না ছাপার ভুল- এফ-৮৬?) কি করবে। ভারতে প্রায় ৩-৪ শত মিগ-২১ ও এস-২২ যাদের গতিবেগ উপরোক্ত বিমানদ্বয়ের গতিবেগের দ্বিগুণ- তাদের সামনে ২০/২৫ খান ঐ বিমান কি করবে? ইরানে খান কয়েক ফ্যান্টম (এফ-৪ এফ) আছে কিন্তু ঐ কখনোই বা কি হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে ভারতের এই বর্তমান সুবিধা নাও থাকতে পারে। সুতরাং এমন সুবর্ণ সুযোগ ভারতের হারানো উচিত নয় এবং শেষ পর্যন্ত কুলদীপ নায়ারও অবশ্য বলেছেন- “ইন্ডিয়া কেন ষ্টিল ইসু এন আলটিমেটম টু পাকিস্তান টুন ষ্টপ দি ইনফ্লাক্স অফ রিফিউজীস অর ফেছ দি কন্সকুইনসেস”। নীচে এশিয়ার কয়েকটি দেশের সৈন্য ও বিমানের সংখ্যা দেওয়া গল- চীন (১) নিয়মিত সৈন্য ২৫ লক্ষ, ৬টি আর্মার্ড ডিভিশন, ৪০০০ ট্যাঙ্ক (২) ২৫০০ যুদ্ধবিমান- অধিকাংশ মীগ- ১৭ ও ১৯, সামান্য সংখ্যক ২১ এবং ৩০০ ইলিউসিন-২৮ (ক্যানবেরার চেয়ে মন্থরগতি এবং কম উচ্চে উড়তে পারে)। ভারত- (১) নিয়মিত সৈন্য ১০ লক্ষ, ৩ আর্মার্ড ডিভিশন বা সমসংখ্যক ব্রিগেড ও রেজিমেন্ট, ১০০০ মাঝরি ও ৪০০ হাল্কা ট্যাঙ্ক (২) প্রায় ৭০০০ যুদ্ধ বিমান- এক তৃতীয়াংশ শব্দের দ্বিগুণ গতিবেগ সম্পন্ন, ৭০ বেমারু। ৪০০০ কামান। পাকিস্তান- (১) নিয়মিত সৈন্য প্রায় ৩ লক্ষ, ২ আর্মার্ড ডিভিশন, ৭০০ মাঝারি, ১০০ হালকাআ ট্যাঙ্ক (২) প্রায় ৩০০ যুদ্ধ বিমান- মাত্র ৩০ টি শব্দের দ্বিগুণ গতিবেগ সম্পন্ন (মীরাজ)। ১০০০ কামান।