পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

809 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩২৪। কলকাতার দূতাবাসগুলিতে বদলী ও দপণ ১১ জুন, ১৯৭১ নতুন নিয়োগের হিড়িক, কারণ রাজনৈতিক? কলকাতার দূতাবাসগুলিতে বদলী ও নতুন নিয়োগের হিড়িক কারণ রাজনৈতিক? (দর্পণ সংবাদদাতা) হঠাৎ কি যেন একটা ঘটেছে বা ঘটতে যাচ্ছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছুটে কলকাতা এলেন। দূতাবাসে দূতাবাসে গুঞ্জন,ফিসফিসানী। বাংলাদেশ? ভারত -পাকিস্তান যুদ্ধ? পঞ্চাশ লক্ষ নবাগত শরণার্থীর চাপ? পশ্চিমবঙ্গে ধূমায়িত অসন্তোষ? এলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। “ যুদ্ধ না শান্তি- প্রধান প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীকে? খবর নয়, খবর তৈরী করার চেষ্টাও আনন্দবাজারের কল্যাণে খবর হয়ে উঠলো। খবরের কাগজ তাই বোধ হয় দূতাবাসের অফিসগুলোতে বদলীর পালা চলেছে। সোভিয়েত, মার্কিন, পশ্চিম জার্মানী, পূর্ব জার্মানী, উত্তর কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স এবং মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশ নিয়ে প্রায় সবকটি দেশের কলকাতা দূতাবাসে নতুন নতুন লোকের আমদানী হচ্ছে। সবাই জানেন (সেলার ও কানের সোভিয়েতবিরোধী চক্রান্তের ইতিহাস, রবিন্স, সিডনী রিলিদের পরিচয় আজ অনেকেরই অজানা নেই) যে বৈদেশিক দূতাবাসে সংস্কৃতি , বার্তা বিভাগ, সাহায্য বিনিময় বিভাগ ও রেডক্রস জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অনেকেই স্ব স্ব দেশের রাজনৈতিক গুপ্তচরের কাজ নিয়ে আসেন। সুতরাং হঠাৎ কলকাতার দূতাবাসগুলির এই সব বিভাগের প্রধানদের পাইকারী বদলী এবং নতুন লোকের আগমন ওয়াকিবহাল মহলে বিস্ময় ও ঔৎসুক্যের সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমবঙ্গে হত্যা খুনোখুনির রাজনীতি আমদানী এবং তা অবলীলাক্রমে বিনা বাধায় চালিয়ে যাওয়ার পেছনে বৈদেশিক যে গুপ্তচর চক্র সক্রিয় তার মধ্যে পৃথিবীর দুটি বৃহত্তম শক্তি নাকি অবতীর্ণ। আটষট্টি সাল মার্কিন গুপ্তচর বিভাগের বড় কর্তারা লালবাজারে পর্যন্ত ঘুরে গিয়েছেন।.... তাই এবার ছোট ছোট রাজনৈতিক দল এবং বিচ্ছিন্ন , হাতাশাগ্রস্ত রাজনৈতিক সম্পর্কযুক্ত লোক দিয়ে ঘটনাগুলোর নতুন আবরণ সৃষ্টি করা দরকার। আমরা দেখেছি উনিশশো আঠারো-তেইশ সালের সোভিয়েত দেশেও বিভিন্ন বিপ্লব বিরোধী ও প্রতিবিপ্লবী ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলিকে বৃটিশ, ফ্রান্স, মার্কিন গোয়েন্দা চক্র শিশু সোভিয়েত রাষ্ট্র ও প্রায় অনভিজ্ঞ বলশেভিক পার্টির ধ্বংস করার চক্রান্তে নিযুক্ত করতে পেরেছিল। ভারতবর্ষের ওপর সোভিয়েত এবং মার্কিন খবরদারী প্রায় সমান। বর্তমান সোভিয়েত রাষ্ট্রও পুরোপুরি রেনিনের স্তালিনের আদর্শ মেনে চলে না। বরং দুনিয়ার ভাগবাটোয়ারায় তারা মার্কিনীদের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বোঝাপড়ায় আগ্রহী মিত্রও বটে। তাঁরা অন্তত: ততখানিই সদয়। বৃটেন, ফ্রান্স পশ্চিম ও পূর্ব জার্মানী, কোরিয়া প্রভৃতি কমবেশী এই দুটি বৃহত্তম শক্তিরই অনুসরণকারী মাত্র যদিও তাদের নিজ নিজ দেশের বিশেষ স্বার্থও তারা দেখেন।.....