পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

904 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড কিছু নাই। কিন্তু রাশিয়ার পক্ষে, তাঁহার অভিমতে সায় দেওয়া সম্ভব হইল কী করিয়া? বিশেষত, শ্রীমতী গান্ধীর মস্কো সফরের পরে। মস্কো দলিলে কিন্তু “রাজনৈতিক মীমাংসা’, শরণার্থী সমস্যা সবই উল্লিখিত আলোচিত। হইতে পারে রুশ প্রধানমন্ত্রী আলজিরিয়ার চাপে এই বিবৃতিতে সম্মত হইয়াছেন। হইতে পারে আফ্রিকার ওই খন্ডে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে অন্য স্বার্থ তাঁহার কাছে মূল্যবান ঠেকিয়াছে। কিন্তু এ ধরনের কুটনীতি নীতি হিসাবে কি শ্রেয়? এখন টীকাভাষ্যযোগে হয়তো প্রমাণ করা হইবে-ভারত-রুশ চুক্তি বা ইন্দিরাকোসিগিন যুক্তবিবৃতির ধারাবাহিকতা ইহাতে ক্ষুন্ন হয় নাই, এই উপমহাদেশকে যুদ্ধের বিপদ হইতে মুক্ত রাখিবার জন্যই দুই বন্ধু রাষ্ট্র কোদালকে কোদাল না বলিয়া অন্য কথা পাড়িয়াছেন। তাহাতে রুশ-ভারত বন্ধুত্বে প্রশ্নবোধক চিহ্নটি হয়তো লুপ্ত হইবে, কিন্তু ইত্যবসরে ইয়াহিয়া খানের যে বিস্তর সুবিধা হইয়া গেল তাহাতে সন্দেহ না-রাখাই ভাল। শোনা যাইতেছে, তিনি মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসন মিটাইয়া আনিয়াছেন। তিনিই আইন প্রণেতা, তিনিই বিচারক। তা ছাড়া আগেভাগেই তিনি জানাইয়া রাখিয়াছেন-মুজিবুর দেশদ্রোহী এবং মৃত্যুদন্ডই তাঁহার প্রাপ্য। ইয়াহিয়া হয়তো এই মুহুর্তে সে দন্ড মিটাইয়া দিবেন না, আপাতত করুণাময়ের ভূমিকা গ্রহণ করিবেন। তাঁহার এবং জনাব ভুট্টোর চালচলন ইঙ্গিতে বলিতেছে পাকিস্তান বাংলাদেশকে হাতে রাখিবার জন্য চূড়ান্ত চেষ্টা চালাইবে সে-কাজে তাঁহাদের সমর্থক প্রয়োজন। খানসাহেব নাকি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে গোপনে চিঠি লিখিয়াছেন। আলজিয়ার্স বিবৃতির পর এবার তিনি ইচ্ছা করিলে প্রকাশ্যেই রুশ প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি লিখিতে পারেন। কেননা, ওই বিবৃতিতে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার জন্যও উদ্বেগ প্রকাশ করা হইয়াছে।