পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড পূর্বাঞ্চলের জিওসি লেঃ জেঃ কজগজিৎ সিং অরোরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, বাংলাদেশের ভিতরে এবং যশোহর ও খুলনার মধ্যে আটকে পড়া পাক বাহিনী মেঘনা ও পদ্মা দিয়ে পালাবার চেষ্টা করছে। তাদের উপর ভারতীয় বিমান বাহিনী ক্রমাগত বিমান থেকে বোমা ফেলেছে। জেনারেল বলেন, এখন পাকিস্তানী বাহিনী দু’দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একটি অংশ রয়েছে হিলির উত্তরে আর অন্যটি বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকে। উত্তরে যে বাহিনী আছে তার সংখ্যা এক ব্রিগেড। তিনি বলেন, ভারতীয় বাহিনী পাক বাহিনীকে যশোহর থেকে দক্ষিণ দিকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। জেনারেল আরও বলেন, ব্ৰহ্মপুত্রের তীর ঘেঁষে উত্তর দিক থেকে যে ভারতীয় বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে-তারা ময়মনসিংহ সদর শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে জামালপুর ঘিরে রেখেছে। মেঘালয় সীমান্তের হাদুয়াঘাটের দিক থেকে আর একটি সৈন্যদল ময়মনসিংহ এর দিকে এগোচ্ছে। শ্রীহট্ট এলাকায় লড়াই চলছে। জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ময়নামতি দুর্গে পাকবাহিনীকে ভারতীয় বাহিনী ঘিরে রেখেছে। সৈয়দপর ক্যান্টনমেন্টেও লড়াই চলছে। একজন বিদেশী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জেনারেল দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, শরণার্থীদের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ যেসব যানবাহন দিয়েছিলেন, তার একটিকেও বাংলাদেশের এই অভিযানে নামানো হয়নি। তিনি বলেন, মুক্তিবাহিনী ভারত বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছে। এছাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন করা, আগে থেকে খবরাখবর সংগ্রহ করা ইত্যাদি ব্যাপারে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের কার্যকলাপ যুদ্ধরত ভারতীয় সেনাবাহিনীকে যথেষ্ট সাহায্য করছে। জেনারেল অরোরা আরো বলেন, মুক্তিবাহিনীর লোকজনেরা কয়েকটি থানার ভার হাতে নিয়েছেন এবং স্থানীয় লোকদের দেখাশুনা করছেন। আগরতলা, ৯ ডিসেম্বর-তিতাস নদী পেরিয়ে সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে যেতে দেখলাম পথের দু’ধারে পাক সেনারা পরিত্যক্ত শত শত বাংকার পড়ে রয়েছে। সারা শহর আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে। মাইকে মুজিবের গলা শুনে চমকে উঠলাম। মুজিব কি ফিরে এসেছে? না-মুজিব নয়, এ মুজিবের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করা। ঢাকার মাঠে তার ঐতিহিসক বক্তৃতার রেকর্ডটি চালিয়ে লোকে বারবার তার কণ্ঠস্বর শুনছে। এখান থেকে আখাউড়া প্রায় ১৩/১৪ মাইল। আখাউড়ার দিকে এগোচিছ। দেখি বহু লোক যারা বাড়িঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তারা ফিরে আসছেন। তারা বলেন, গত চার মাসের মধ্যে এই প্রথম গ্রামে ফেরার সুযোগ হচ্ছে। এর আগে পাক সেনাদের ভয়ে তারা আসতে পারেননি। উত্তর খন্ডে শিলিগুড়ি থেকে দীনেন চক্রবর্তী জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনী আজ উত্তর রণাঙ্গণে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সড়কঘাঁটি রংপুর জেলার পলাশবাড়ি ও শাদুল্লাপুর দখল করে নিয়েছেন। সামরিক দিক থেকে এই দুইটি ঘাঁটি দখলের তাৎপর্য বাংলাদেশের উত্তর খন্ডে রংপুর-দিনাজপুর ও বগুড়া জেলায় পাকবাহিনী এখন সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন এবং অবরুদ্ধ। কোনদিক থেকে আর পালানোর রাস্তা নেই। যমুনা পেরিয়ে ঢাকা-তাও না। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন পদস্থ অফিসার সাংবাদিকদের বলেন, রংপুর জেলার গাইবান্ধার উত্তরে রেলপথটিও তারা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করে দিয়েছেন। ফলে রংপুর ও গাইবান্ধার মধ্যে রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন।