পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

958 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৪০২ পালাতে দেব না, হুশিয়ার-মানেকশ আনন্দবাজার পত্রিকা | ১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পালাতে দেব না, হুঁশিয়ার –মানেকশ বিশেষ সংবাদদাতা নয়াদিল্লী, ১২ ডিসেম্বর-বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী সৈন্যদের পালাতে দেওয়া হবে না। তাদের পালাবার পথ বন্ধ করার জন্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থল বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল মানেকশ আজ বেতারে বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীর সেনাপতিদের উদ্দেশ্যে এই হুঁশিয়ারি প্রচার করেছেন। জেনারেল মানেকশ বলেন, পাকিস্তানীরা যে পাঁচটি বাণিজ্যিক জাহাজে করে পালাতে মতলব করেছে তা তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি হুশিয়ার করেন দেন-“খবরদার এরকম চেষ্টা করবেন না। যদি করেন আপনাদের বাণিজ্যিক জাহাজগুলি তো ধ্বংস হবেই-সেই সঙ্গে আপনাদের সৈন্যরাও মারা যাবে।” মেজর জেনারেল রাও ফারমান আলির উদ্দেশ্যে এই বেতারবার্তা রাও ফারমান আলি হচ্ছেন বাংলাদেশের অসামরিক পুতুল সরকারের সামরিক উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রামে পাকিস্তানী নৌবাহিনীর ফ্লাগ অফিসার কম্যান্ডিং। জেনারেল মানেকশর এটিই শেষ হুশিয়ারী। জেনারেল বলেন, “আমি সৈনিকদের জীবন বাঁচাতে চাই। এজন্যই আমার হুশিয়ার।” এই বেতার বার্তার আগে জেনারেল মানেকশ বিশেষভাবে জেনারেল ফারমান আলির নিকট আর একটি হুঁশিয়ারি প্রচার করেছিলেন। এতে তিনি পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীগুলিকে বাংলাদেশে অগ্রসরমান ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন। পাকিস্তানী সেনাপতিকে তিনি বলেন, অন্যথায় আপনার অধীনস্থ সৈনিক ও নাগরিকদের জীবনহানির জন্য একমাত্র আপনিই দায়ী হবেন।” জেনারেল মানেকশ অধিকৃত বাংলাদেশে পাকিস্তানী সেনাপতির উদ্দেশ্যে আবার বলেন, আমার সৈন্যবাহিনী চার দিক থেকে আপনাদের ঘিরে ধরছে। আমি আপনার সৈন্যদের এখনই আমার সেনাবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করার জন্য বারবার পরামর্শ দিয়ে আসছি। সমুদ্রপথে কিংবা আকাশ পথে কোন দিকেই তাদের আর পালাবার জো নেই। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যে আপনাদের নিকট কোন সাহায্য আসবে সে আশাও নেই। প্রতিরোধ নিরর্থক। প্রতিরোধ করা মানেই আপনার অধীনস্থ বহু নির্দোষ সৈনিকের মৃত্যু। ” তিনি বলেন, “আপনার যেসব সামরিক ও আধাসামরিক লোক ইতিমধ্যে আমার বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের জন্য আমি পূর্ণ নিরাপত্তা ও জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা করেছি। আপনারা যদি আত্মসমর্পণ করে আমার রক্ষণাবেক্ষণে না আসেন তবে পশ্চিম পাকিস্তানী নারী-পুরুষ ও শিশুদেরও জীবন খুবই বিপন্ন। আমি আপনার সেনা ছাউনিগুলির বিরুদ্ধে যথেষ্ট কম বল প্রয়োগ করেছি যাতে লোকক্ষয় বেশী না হয়, কিন্তু আমি আর সময় দিতে অক্ষম। আমি আবার বলছি, আপনারা আমার পরামর্শে কান দিন। অন্যথায় সৈন্য ও অন্যান্য নাগরিকদের মৃত্যুর পুরা দায়িত্ব আপনার উপরই বর্তাবে।” জেনারেল মানেকশ’র বেতার বার্তা আজ প্রথমে বেলা দেড়টায় এবং আবার বিকাল তিনটায় জেনারেল ফারমান আলির উদ্দেশ্যে আকাশবাণী থেকে প্রচারিত হয়।