পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূব ভারত রেলপথে *ś খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীতে সপ্তগ্রামে রূপ বা পরম ভট্টারক শ্রীশ্রী ১০৮ রূপনারায়ণ সিংহ নামে বাগদী জাতীয় বৌদ্ধধৰ্ম্মাবলম্বী একজন পরাক্রমশালী রাজা ছিলেন। ইনি সপ্তগ্রামে একটি বিহার বা সঙঘারাম প্রতিষ্ঠা করেন; ইহার কীৰ্ত্তির কোন চিহ্নই এখন আর পাওয়া যায় না। সপ্তগ্রাম একটি প্রসিদ্ধ বৈষ্ণবতীর্থ। এখানে দ্বাদশগোপালের অন্যতম শ্রীমৎ উদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের শ্রীপটি অবস্থিত। শ্রীচৈতন্যদেবের প্রধান পার্ষদ নিত্যানন্দ এই স্থানে বহুদিন অবস্থান করিয়াছিলেন। কথিত আছে শ্রীমৎ উদ্ধারণ দত্ত নিত্যানন্দের বিবাহে ১০ সহস্র টাকা ব্যয় করিয়াছিলেন। হুসেন শাহের সময়ে গোবৰ্দ্ধন ও হিরণ্য মজুমদার নামক দুই ভ্রাতা সপ্তগ্রামের “ অধিকারী ’ বা রাজা ছিলেন। তাঁহাদের বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ টাকার উপর ছিল। হিরণ্য মজুমদারের একমাত্র পুত্র রঘুনাথ শ্রীচৈতন্যদেবের একান্ত অনুরাগী ভক্ত ছিলেন। কপিলাবস্তুর রাজকুমার সিদ্ধার্থের ন্যায় বিপুল ঐশ্বৰ্য্য স্বেচছায় পরিত্যাগ করিয়া তিনি শ্রীচৈতন্যদেবের পদে আত্মসমপণ করেন এবং কঠোর বৈরাগ্য সাধন ও অতুলনীয় ভক্তির প্রভাবে উত্তরকালে বৈষ্ণব জগতের চির-সম্মানিত ঘট গোস্বামীর অন্যতমরূপে পরিচিত হন। প্রতিবৎসর অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণ দ্বাদশী তিথিতুে সপ্তগ্রামে একটি বৈষ্ণব মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। চণ্ডী-রচয়িত পরাশরপুত্র সপ্তগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ; পরে তিনি ময়মনসিংহ জেলার দক্ষিণে মেঘনা তীরে ন্যানপুর গ্রামে বাস স্থাপন করেন। সপ্তগ্রামের প্রাচীন কীৰ্ত্তির মধ্যে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে নিৰ্ম্মিত একটি মসৃজিদ ও কবর আছে। উহা এখন সরকারের “রক্ষিত কীৰ্ত্তি’ বিভাগের অস্তগত। মসজিদের শিলা-লেখ । হইতে জানা যায় যে ক্যাসৃপিয়ান হ্রদের তীরবর্তী আমুল নগর নিবাসী সৈয়দ ফক্বুদ্দীনের পুত্র সৈয়দ জমালদীন হুসেন ১৫২৯ খৃষ্টাব্দে আবুল মুজাফফর নুহুস্রা শাহের রাজত্ব কালে এই মসজিদ নিৰ্ম্মাণ করেন। - মগরা—হাওড়া হইতে ২৯ মাইল দূর। ইহা হুগলী জেলার একটি বাণিজ্যপ্রধান স্থান। বঙ্গীয় প্রাদেশিক রেলপথ নামক ছোট মাপের লাইট রেলওয়ে লাইনের সহিত ইহা একটি জংশন স্টেশন। মগরা হইতে এই ছোট রেল ত্রিবেণী ও অপরদিকে তারকেশ্বর পর্য্যস্ত গিয়াছে। এই ছোট রেল দিয়া তারকেশ্বর যাইবার পথে মহানাদ ও দ্বারবাসিনী অতি প্রাচীন স্থান। অনেকে অনুমান করেন যে মহানাদে এক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী ছিল। এই স্থানে হিন্দু আমলের পুরাতন কয়েকটি মন্দির, কয়েকটি প্রাচীন দীঘি ও রাজপ্রাসাদের ধবংসাবশেষ আছে। গড়পাড়া বা গড়ের বাগান নামক স্থানে রাজা চন্দ্রকেতুর গড় ছিল এইরূপ জনপ্রবাদ। গভীর জঙ্গলের মধ্যে এখনও গড়ের কিছু কিছু চিহ্ন দৃষ্ট হয়। সম্প্রতি খননের দ্বারা মহানাদের প্রাচীন কীৰ্ত্তি উদ্ধারের প্রচেষ্টা চলিতেছে। মহানাদের নিকটবৰ্ত্তী দ্বারবাসিনীতে দ্বারপাল প্রভৃতি গোপরাজগণের রাজধানী ছিল বলিয়া কথিত। এখানে জীয়ৎকুণ্ড নামক পুষ্করিণী, সাত সতীনের দীঘি, দ্বারবাসিনী দেবীর মন্দির ও পাপহরণ সরোবর প্রভৃতি দ্রষ্টব্য বস্তু। মহানাদের জটেশ্বরনাথ মহাদেবের পুরাতন মলির দেখিতে জুঠি সুন্দর। ইহা রাজা চন্দ্রকেতু কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বলিয়া কথিত। শিবরাত্রির সময়ে এখানে একটি বট্টমেলা হয়, উহা “ মানাদের জাত ” নামে বিখ্যাত । মন্দিরের সম্মুখস্থ জাততলায় কতকগুলি সমাধিস্তম্ভ আছে, এইগুলি প্রাচীনযুগের