পাতা:বামুনের মেয়ে-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে Vr8 ঠাকুরমা নিজেও একটু হাসিয়া বলিলেন, সমস্তই ত জানো দিদি, কিন্তু তবু ত তোমাদের মোহ কাটে না ? এইসকল বিরুদ্ধ সমালোচনা জগদ্ধাত্রীর গোড়া তহঁতেই ভাল লাগিতেছিল না এবং মনে মনে তিনি বিরক্তও কম হইতেছিলেন না । শাশুড়ীর কথার উত্তরে বলিলেন, তখনকার দিনের কথা জানিনে মা, কিন্তু এখন অত বিয়েও কেউ করে না, ও-সব অত্যাচারও আর নেই । আর জন-কতক লোক যদি একসময়ে অন্যায় করেই থাকে, তাই বলে কি বংশের সম্মান কেউ ছেড়ে দেয় মা ? আমি বেঁচে থাকতে ত সে হবে না । গৃহস্বামিনী পুত্রবধূর উত্তপ্ত কণ্ঠস্বরে শাশুড়ী নীরব হইলেন, কিন্তু সন্ধ্যা ব্যথিত হইয়া উঠিল । সে পিতামহীর আর একটু কাছে গিয়া কোমল-স্বরে জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু কেন তারা অমন অত্যাচার করতেন ঠাকুরমা ? তাদের কি মায়াও হ’তে না ? ঠাকুরমা সন্ধ্যার হাত ধরিয়া তাহাকে পার্শ্বে টানিয়া লইয়া বলিলেন, মায়া কি কবে হবে দিদি ? একটি রাত ছাড়া যাব সঙ্গে আর জীবনে হয়ত কখনো দেখা হবে না, তার জন্তে কি কারও প্রাণ কাদে ? আর সে অত্যাচার কি আজই থেমে গেছে ? তোমার ওপরে যা হতে যাচ্ছে সে কি কারও চেয়ে কম অত্যাচার দিদি ? জগদ্ধাত্রী হাতের কাজ রাখিয়া দিয়া অকস্মাৎ উঠিয়া দাড়াইয়া অত্যন্ত কঠোর-স্বরে মেয়েকে উদ্দেশ করিয়া বলিলেন, তুই ঠাকুর-ঘরে যাবি, না আমি কাজ-কৰ্ম্ম ফেলে রেখে উঠে যাবে, সন্ধ্যা ? সন্ধ্যা মায়ের মুখের দিকে চাহিল, কিন্তু কথাও কহিল না, উঠিবারও চেষ্টা করিল না। ধীরে ধীরে পিতামহীকে জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু যে জিনিষটার এত সম্মান—এতদিন ধরে এমনভাবে চলে। আসচে ঠাকুরমা, তাকে কি নষ্ট হতে দেওয়াই ভালো ?