পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মন্দির
৯৭

উপনিষদ এইরূপ কথাই একটি উপমায় প্রকাশ করিয়াছেন—

“দ্বা সুপর্ণা সবুজা সখার সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে।
তয়ােরন্যঃ পিপ্পলং স্বাদ্বত্ত্যনশ্নন্নন্যেহভিচাকশীতি॥”

 দুই সুন্দর পক্ষী একত্র সংযুক্ত হইয়া একবৃক্ষে বাস করিতেছে। তাহার মধ্যে একটি স্বাদু পিপ্পল আহার করিতেছে, অপরটি অনশনে থাকিয়া তাহা দেখিতেছে।

 জীবাত্মা-পরমাত্মার এরূপ সাযুজ্য, এরূপ সারূপ্য, এরূপ সালোক্য, এত অনায়াসে, এত সহজ উপমায়, এমন সরল সাহসের সহিত আর কোথায় বলা হইয়াছে! জীবের সহিত ভগবানের সুন্দর সাম্য যেন কেহ প্রত্যক্ষ চোখের উপর দেখিয়া কথা কহিয়া উঠিয়াছে—সেইজন্য তাহাকে উপমার জন্য আকাশ-পাতাল হাতড়াইতে হয় নাই।—অরণ্যচারী কবি বনের দুটি সুন্দর ডানাওয়ালা পাখীর মতো করিয়া সসীমকে ও অসীমকে গায়ে-গায়ে মিলাইয়া বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছেন, কোনো প্রকাণ্ড উপমার ঘটা করিয়া এই নিগূঢ় তত্ত্বকে বৃহৎ করিয়া তুলিবার চেষ্টামাত্র করেন নাই। দুটি ছোটো পাখী যেমন স্পষ্টরূপে গোচর, যেমন সুন্দরভাবে দৃশ্যমান, তাহার মধ্যে নিত্য পরিচয়ের সরলতা যেমন একান্ত, কোনো বৃহৎ উপমায় এমনটি থাকিত না। উপমাটি ক্ষুদ্র হইয়াই সত্যটিকে বৃহৎ করিয়া প্রকাশ করিয়াছে—বৃহৎ সত্য-দ্রষ্টার যে নিশ্চিন্ত সাহস, তাহা ক্ষুদ্র সরল উপমাতেই যথার্থভাবে ব্যক্ত হইয়াছে।

 ইহারা দুটি পাখী, ডানায়-ডানায় সংযুক্ত হইয়া আছে-ইহারা সখা, ইহারা একবৃক্ষেই পরিষক্ত—ইহার মধ্যে একজন ভোক্তা, আর একজন সাক্ষী, একজন চঞ্চল, আর একজন স্তব্ধ।

 ভুবনেশ্বরের মন্দিরও যেন এই মন্ত্র বহন করিতেছে—তাহা দেবালয়