পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৭৩

প্রবাহিত—সেইটেই তোমার সাধনা। আমরা কবিরা কেবল সাধকদের জন্য লিখিনে, বিশেষ রসের রসিকদের জন্যও না। আমরা লিখি রূপদ্রষ্টার জন্য—তিনি বিচার করেন সৃষ্টির দিক থেকে—যাচাই ক’রে দেখেন রূপের আবির্ভাব হোলো কি না। আমার রূপকার বিধাতা সেইজন্যে আমাকে নানা রসের নানা ভাবের নানা উপলব্ধির মধ্যে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ান—নিজের মনকে নানান্‌খানা ক’রে নানা চেহারায়ই গড়তে হয়। যেই একটা কিছু চেহারা জাগে ওস্তাদজী তখন আমাকে চেলা ব’লে জানেন। আমি যে-সব কর্ম্ম হাতে নিয়েছি তার মধ্যেও সেই চেহারা গড়ে তোলবার ব্যবসায়। উপদেশ দেওয়া উপকার করা গৌণ, রচনা করাই মুখ্য। আমি কী ও বটে কিন্তু যার অন্তর্দৃষ্টি আছে সে বুঝতে পারে আমি কারুকর্ম্মের কর্ম্মী। আমি কবিতা লিখি, গান লিখি, গল্প লিখি, নাট্যমঞ্চেও অভিনয় করি, নাচি নাচাই, ছবি আঁকি, হাসি, হাসাই, একান্তে কোনো একটা মাত্র আসনেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে বসবার উপায় রাখিনে। যারা আমাকে ভক্তি করতে চায় তাদের পদে পদে খটকা লাগে। তুমি আমার লেখা পড়তে চেয়েছ, পোড়ো, কিন্তু কবির লেখা বলেই পোড়ো। অর্থাৎ আমি সকলেরই বন্ধু, সকলেরই সমবয়সী, সকলেরই সহযাত্রী। আমি কিন্তু পণ্ডিত নই। পথ চলতে চলতে আমার যা-কিছু সংগ্রহ। যা-কিছু জানি তার অনেকখানি আন্দাজ। যতখানি পড়ি, তার চেয়ে গড়ি অনেক বেশি।


দার্জ্জিলিং
৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৮

 আমার জীবনটা তিন ভাগে বিভক্ত—কাজে, বাজে কাজে, অকাজে। কাজের দিকে আছে ইস্কুলমাষ্টারী, লেখা, ইত্যাদি, এইটে হোলো কর্ত্তব্য