পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭৪
বিচিত্র প্রবন্ধ

বিভাগ। তার পর আছে অনাবশ্যক বিভাগ। এইখানে যত কিছু নেশার সরঞ্জাম। কাব্য, গান এবং ছবি। নেশার মাত্রা পরে পরে, তীব্রতর হয়ে উঠেছে।

 একদা প্রথম বয়সে কবিতা ছিলেন একেশ্বরী-ধরণীর আদিযুগে যেমন সমস্তই ছিল জল। মনের এক দিগন্ত থেকে আর এক দিগন্ত তারই কলকল্লোলে ছিল মুখরিত। নিছক ভাবরসের লীলা, স্বপ্নলোকের উৎসব। তার পর দ্বিতীয় বয়সে এল কাজের তাগিদ। এই উপলক্ষে মানুষের সঙ্গে কাছাকাছি মিল্‌তে হোলো। তখনি এল কর্ত্তব্যের আহ্বান। জলের ভিতর থেকে স্থল মাথা তুল্‌ল। সেখানে জলের ঢেউয়ে আর উনপঞ্চাশ পবনের ধাক্কায় ট’লে ট’লে কেবল ভেসে বেড়ানো নয়, বাসা বাঁধার পালা, বিচিত্র তার উদ্যোগ। মানুষকে জাতে হোলো, রঙীন্ প্রদোষের আবছায়ায় নয়, সে তার সুখ দুঃখ নিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠ্‌ল বাস্তবলোকে। সেই মানব অতিথি যখন মনের দ্বারে ধাক্কা দিয়ে বল্‌লে, অয়মহং ভোঃ, সেই সময়ে ঐ কবিতাটা লিখেছিলুম, এবার ফিরাও মোরে। শুধু আমার কল্পনাকে নয়, কলাকৌশলকে নয়, দাবি করলে আমার বুদ্ধিকে চিন্তাকে সেবাকে আমার সমগ্র শক্তিকে, সম্পূর্ণ মনুষ্যত্বকে।

 তখন থেকে জীবনে আর এক পর্ব্ব শুরু হলো। একটা আর একটাকে প্রতিহত করলে না—মহাসাগরে পরিবেষ্টিত মহাদেশের পালা এল। মাতামাতি ঐ রসসাগরের দিকে, আর ত্যাগ ও তপস্যা ঐ মহাদেশের ক্ষেত্রে। কাজেও টানে, নেশাতেও ছাড়ে না। বহুদিন আমার নেশার দুই মহল ছিল বাণী এবং গান, শেষ বয়সে তার সঙ্গে আর একটি এসে যোগ দিয়েছে—ছবি। মাতনের মাত্রা অনুসারে বাণীর চেয়ে গানের বেগ বেশি, গানের চেয়ে ছবির। যাই হোক্‌ এই লীলাসমুদ্রেই আরম্ভ হয়েছে আমার জীবনের আদি মহাযুগ—এইখানেই