পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মানা কথা
১৯

ভারাকর্ষণের অধীনতাকে উপেক্ষা করে, তাকে প্রত্যেক সামান্য বায়ুহিল্লোলের অধীনতায় দশদিকে ঘুরে মরতে হবে। অসীম জগৎসমুদ্রে অগণ্য তরঙ্গ, এখানে স্বাধীনতা ব্যতীত আমাদের গতি নাই। অতএব স্বাধীনতা অর্থে বন্ধনমুক্তি নয়, স্বাধীনতার অর্থ কখনো হাল কখনো নোঙরের শৃঙ্খলকে সম্মান করা।

 সেদিন আমাকে একজন বন্ধু জিজ্ঞাসা করছিলেন, নূতন কবির আর প্রয়োজন কী? পুরাতন কবির কবিতা তো বিস্তর আছে। নুতন কথা এমনই কী বলা হচ্ছে? পুরাতন নিয়েই তো কাজ চলে যায়।

 নূতনই পুরাতনকে রক্ষা করে থাকে। পুরাতনের মধ্যেই নুতনের বাস। নূতন পুরাতনে বিচ্ছেদ হোলেই জীবনের অবসান। যেদিন দেখব পৃথিবীতে নূতন কবি আর উঠছে না, সেদিন জানব পুরাতন কবিদের সম্পূর্ণ মৃত্যু হয়েছে।

 নুতন কবিতার ধারা শুষ্ক হোলে পুরাতনে পৌঁছবার স্রোত বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের মধ্যেকার এ দীর্ঘ ব্যবধান অবিশ্রাম লোপ করে রাখছে কে? নূতন কবিতা।

 প্রত্যেক বসন্ত পুরাতনকেই পায় নূতন গানে নূতন ফুলে। আমরা বলি নবীন বসন্ত কিন্তু প্রত্যেক বসন্তই পুরাতন বসন্ত।

 ব্যাপ্ত হোলে যা অন্ধকার, সংহত হোলে তা আলোক, আরো সংহত হোলে তা অগ্নি। সংহতিই প্রাণ। সংহত হোলেই তেজ, প্রাণ, আকার, ব্যক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে। আমরা জড়োপাসক শক্তি-উপাসক ব’লেই বৃহত্বের উপাসনা করে থাকি, বৃহত্বের অভিভূত হয়ে যাই। কিন্তু বৃহৎ অপেক্ষা ক্ষুদ্র অধিক আশ্চর্য্য। হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন বাষ্পরাশি অপেক্ষা একবিন্দু জল আশ্চর্য্য। সুবিস্তৃত নীহারিকা অপেক্ষা