পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮২
বিদ্যাসাগর।

দেহের চর্ম্ম ঠিক হাতীর শুঁড়ের মত কঠিন ছিল। ডাক্তার ভাবনায় পড়িলেন, কি করিবেন। অন্য ছুরি আনিলেও ত কঠিন চর্ম্মে ভাঙ্গিয়া যাইবে। তখন শত্রুঘ্ন নিজে এক উপায় বাহির করিলেন। কামার ঘর হইতে কাস্তিয়ায় ধার দিয়া আনিয়া কাস্তিয়া ক্ষত মুখে প্রবিষ্ট করিয়া কড়, কড়, শব্দে ফোঁড়া কাটা শেষ করিলেন। এতাবৎকাল ভট্টাচার্য্য যাতনাব্যঞ্জক মুখভঙ্গী বা কোন শব্দ না করিয়া অম্লানবদনে বসিয়া রহিলেন।

 দিনময়ী এই তেজস্বী সরল সাহসী পুরুষের কন্যা। ইহার পরিচয় যথাস্থানে পাইবেন। সে পরিচয়ে বংশ-গৌরবের ফল-প্রমাণ। এখন ঈশ্বরচন্দ্রের পাঠ্যপ্রতিষ্ঠার পর্য্যালোচনা করা যাউক।

 পঞ্চদশ বর্ষ বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র অলঙ্কার-শ্রেণীতে প্রবেশ করেন।[১] সেই সময় পণ্ডিত প্রবর প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশ মহাশয় অলঙ্কার-শ্রেণীর অধ্যাপন করিতেন। এই শ্রেণীতে ঈশ্বরচন্দ্র অন্যান্য ছাত্র অপেক্ষা অল্পবয়স্ক ছিলেন। এক বৎসরের মধ্যে তিনি সাহিত্যদর্পণ, কাব্য-

  1. ১২৪২ সালে ঈশ্বৰচন্দ্র অলঙ্কায় শ্রেণীতে পাঠ করেন। ইতঃপূর্ব্বে শিক্ষা-প্রথার প্রচলন সম্বন্ধে দুইটী দল হইয়াছিল। এক দল প্রাচ্য শিক্ষা প্রচলনের, অপরটী পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রচলনের পক্ষপাতী হইয়াছিলেন।প্রথমতঃ প্রাচ্যপ্রথার প্রচলনকারীরা প্রবল হইয়াছিলেন। তদানীন্তন অনেক উচ্চপদস্থ সম্ভ্রান্ত সরকারী কর্ম্মচারী তাঁহাদিগের সহিত যোগ দিয়াছিলেন।ক্রমে কিন্তু এদেশীয় শক্তিশালী ব্যক্তিদিগের সাহায্যে অপর পক্ষ প্রবল হইয়া উঠিয়াছিলেন।লাটসাহেবের অন্যতম সভয় মেকলে সাহেব অভিমত প্রকাশ করেন যে, ভারতে কেবল পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রচলিত করা উচিত। তাঁহার মত প্রবল হইল। প্রাচ্যপ্রথাকামীদের আর মস্তক তিলিবার শক্তি রহিল না। ইংরেজী শিক্ষাপ্রসারের ইহা একটী সুদৃঢ় স্তর।