পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হো হো হাসি রব হইত। তিনি মধ্যম ভ্রাতাকে লইয়া এইরূপ কৌতুক প্রায়ই করিতেন।

 এক বার তিনি বীরসিংহ গ্রাম হইতে হাঁটিয়া আসিতেছিলেন। এক মাঠের মাঝে তিনি দেখিলেন, একটী অতি বৃদ্ধ কৃষক মোট মাথায় করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলেন, লোকটীর বাড়ী সেখান হইতে ২/৩ দুই তিন ক্রোশ দূরে। তাহার যুবক-পুত্ত্র, তাহার মস্তকে বোঝা চাপাইয়া দিয়া তাহাকে বাড়ী পাঠাইয়াছে। বৃদ্ধ এখন চলচ্ছক্তিহীন। বৃদ্ধের অবস্থা দেখিয়া এবং পুত্ত্রের ব্যবহারের কথা শুনিয়া, চক্ষের জলে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বক্ষঃস্থল ভাসিয়া গেল। তিনি তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধের মস্তক হইতে সেই বোঝা আপন মস্তকে তুলিয়া লইলেন এবং বৃদ্ধকে সঙ্গে করিয়া তাহার বাড়ী পর্য্যন্ত গেলেন। তিনি সেই মোট বৃদ্ধের বাড়ীতে পৌঁছিয়া দিয়া, আবার হাঁটিয়া কলিকাতায় আসেন।

 এমন অনেক শুনিয়াছি, সব কথা বলিবার স্থান হইবে না। পাঠক ইহাতেই অবশ্য বুঝিয়াছেন, বিদ্যাসাগরের চলচ্ছক্তি কিরূপ অসামান্য। বল দেখি, মস্তিষ্ক ও দেহের এরূপ শক্তি-সমবায় ইহ সংসারে অতি বিরল কি না? আর কোন বাঙ্গালীর এমন দেখিয়াছ কি? কেবল কি তাই? এমন অনাত্মপরতা বা কয় জনের আছে বল দেখি? বল, বুদ্ধি, দয়া,—তিনটীর একত্র সমাবেশ, বড় ভাগ্যবান্ না হইলে কাহারও হয় কি? একধারে যে ত্রিবেণীর ত্রিধারা, ইহার উপর আবার মাতৃভক্তির মন্দাকিনীধারা পূর্ণোচ্ছ্বাসে প্রবাহিত। এই খানে তাহারও একটু পরিচয় দিব। ফোর্ট উইলিয়ম্ কলেজে কার্য্য করিবার সময় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তৃতীয় ভ্রাতার বিবাহ সম্বন্ধ হইয়াছিল। বীরসিংহ গ্রাম হইতে জননী পত্র লিখিয়া পাঠাইলেন,—“তুমি অতি অবশ্য আসিবে।” মাতৃভক্ত বিদ্যাসাগর আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। তিনি তখন মার্সেল্ সাহেবের নিকট ছুটীর জন্য প্রার্থনা করিলেন; ছুটী কিন্তু পাইলেন না। তখন তিনি ভাবিলেন,—আমাকে না দেখিয়া মা মরিবেন! অত্যন্ত কৃতঘ্ন আমি, মাতৃ-আজ্ঞা