পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বীরসিংহে ডাকাইতি।
২৫৫

লোকের বাড়ী বাড়ী গিয়া, গোপনে অর্থ-সাহায্য করিয়া আসিতেন। এইরূপ গোপনে অর্থ-সাহায্য করিবার কারণ এই যে, এই সকল লোক অবস্থাহীন বটে; কিন্তু ভদ্র-পরিবারভুক্ত; সুতরাং প্রকাশ্যে অর্থ-সাহায্যের প্রার্থনা করা নিশ্চিত তাহাদের পক্ষে ঘোরতর লজ্জাকর।

 এইরূপ অকাতর অর্থ বিতরণ করিতেন বলিয়া, লোকের মনে ধারণা হইয়াছিল যে, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পরিবার বিলক্ষণ বিষয়-বিভবসম্পন্ন। তাৎকালিক দস্যু ডাকাইত-সম্প্রদায়ের মনেও সেই ধারণা হইয়াছিল। কোন কালে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সঞ্চয়বাসনা ছিল না। তাঁহার পিতা মাতা পুত্রকে সঞ্চিত সম্পত্তি মনে করিতেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জননী একবার হ্যারিসন্‌ সাহেবকে স্পষ্টাক্ষরে এই কথাই বলিয়াছিলেন।[১]


  1. ১২৬১ সালে বা ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে হারিসন্‌ সাহেব ইন্‌কম ট্যাক্সের তদন্তের জন্য কমিশনর নিযুক্ত হন। বিদ্যাসাগর মহাশয় একদিন হ্যারিসন্‌ সাহেবকে বীরসিংহের বাড়ীতে লইয়া যাইবার জন্য নিমন্ত্রণ করেন। হ্যারিসন্‌ সাহেব বলেন,—হিন্দুপ্রথানুসারে বাড়ীর কর্ত্তা বা কর্ত্রী নিমন্ত্রণ না করিলে নিমন্ত্রণ লইব না।” সময়ান্তরে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জননী হ্যারিসন্‌ সাহেবকে নিমন্ত্রণ করিয়া পাঠান। সাহেব বীরসিংহ গ্রামে গিয়া হিন্দুপ্রথা মতে দণ্ডবৎ হইয়া, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জননীকে প্রণাম করেন। তিনি হিন্দুপ্রথানুসারে আসনপিঁড়ি হইয়া বসিয়া আহারাদি সমাপনপূর্ব্বক বিদ্যাসাগরের জননীকে জিজ্ঞাসা করেন, - “আপনার ক্ষত ধন?” জননী সহাস্যবদনে উত্তর করিলেন - “চারি ঘড়া ধন।” সাহেব বলিলেন - “এত ধন?” জননী তখন সহাস্যবদনে জ্যেষ্ঠপুত্র বিদ্যসাগর মহাশয় ও অপর তিনটী পুত্রের প্রতি অঙ্গুলি সঙ্কেত করিয়া বলিলেন - “এই আমার চারি ঘড়া ধন।” সাহেব বিস্মিত হইলেন। তিনি বলিলেন,—"ইনি দ্বিতীয় রোমক রমণী মিলিয়া।”