পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরোপকার।
৩৫১

এবং রাজকৃষ্ণ বাবুর প্রগাঢ় যত্নে প্রেস ও ডিপজিটরীর কার্য্য সবিশেষ সুশৃঙ্খলায় পরিচালিত হইয়া অনেকটা লাভজনক হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। কিন্তু কেবল পরোপকারার্থে তাঁহাকে পরে এ প্রেসও বিক্রয় করিতে হইয়াছিল। সে কথা যথাস্থানে বলিব।

 রাজকৃষ্ণ বাবু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আ-যৌবন সুহৃদ্। তাঁহার সর্ব্বাঙ্গীন শ্রীবৃদ্ধিসাধনের মূলই বিদ্যাসাগর মহাশয় কৃতজ্ঞতাপ্রকটনের ইহা অন্যতম প্রমাণ। যে রাজকৃষ্ণ বাবুর বাড়ীতে বিদ্যাসাগর মহাশয় অন্তরতম আত্মীয়ের ন্যায় আহার, শয়ন প্রভৃতি নিত্য ক্রিয়া সম্পন্ন করিতেন, যে রাজকৃষ্ণ বাবু তাঁহাকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার ন্যায় সম্মান ও শ্রদ্ধা করিতেন, যে রাজকৃঞ্জ বাবুর একটী শিশুকন্যার মৃত্যুতে বিদ্যাসাগর মহাশয় মৃতকল্প হইয়াছিলেন,[১] যে রাজকৃষ্ণ বাবুর জননী বিদ্যাসাগরকে পুত্রবৎ স্নেহ করিতেন, সেই রাজকৃষ্ণ বাবুর উন্নতিসাধন করা, বিদ্যাসাগরের পক্ষে বিচিত্র কি? কেবল রাজকৃষ্ণ বাবু কেন, বিদ্যাসাগর মহাশয়, কত লোকের চাকুরি করিয়া দিয়াছেন, তাহার গণনা হয় কি? রাজকৃষ্ণ বাবু তো ঘনিষ্ঠ আত্মসম্পৰ্কীয়, কত দূর-সম্পৰ্কীয় অপরিচিত লোক ও তাঁহার প্রসাদে চাকুরী পাইয়া, অন্ন-সংস্থাপন করিয়া লইত।

 দুঃখের বিষয়, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রসাদে যাঁহারা চাকুরী


  1. রাজকৃষ্ণ বাবুর এই কন্যাটির মৃত্যুতে বিদ্যাসাগর মহাশয় শোকোচ্ছ্বাসপূর্ণ হৃদয়ে একটী গঙ্গা প্রবন্ধ রচনা করিয়াছিলেন। সে রচনাটী তৃতীয় বর্ষের বৈশাখ মাসের “সাহিত্যে” প্রকাশিত হইয়াছিল। ইহা প্রভাতী-সম্ভাষণ নাম পুস্তকাকারে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হইয়াছে। গদ্যে ইহা করুণাত্মক কাব্য। পডিতে পড়িতে চক্ষের জল সংবরণ করা যায় না। প্রভাবতী কি করিত, কি বলিত, কি খাইত ইত্যাদি কবিতার ভাষায় লিখিত। ইহা কাব্যে রচনা শক্তিমত্তার পরিচয়।