পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭৮
বিদ্যাসাগর।

(ছয় সহস্র) টাকা ঋণ করিয়া তিনি তদ্দণ্ডেই মাইকেলকে পাঠাইয়া দেন। টাকার প্রয়োজন হইলে, তিনি প্রায়ই বন্ধুবান্ধবদিগের নিকট হইতে কোম্পানীর কাগজ লইয়া বন্ধক দিতেন। পরে তিনি সময় মত টাকা সংগ্রহ করিয়া, সুদে আসলে সব পরিশোধ করিতেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় যদি তাঁহাকে অর্থসাহায্য না করিতেন, তাহা হইলে, মাইকেলকে নিশ্চিতই অনাহারে সেই বিদেশেই মৃত্যুমুখে পড়িতে হইত।

 মৃতকল্প মাইকেল আদৌ মনে করেন নাই যে, তিনি একে বারে এত অর্থানুকূল্য পাবেন। বলাই বাহুল্য, সেই সাহায্যে তাঁহার মৃত দেহে জীবন সঞ্চার হইয়াছিল। তিনি তখনই জীবনদাতা বিদ্যাসাগরকে হৃদয়ের গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিয়া আনন্দ-বিগলিত-চিত্তে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়া পত্র লিখিয়াছিলেন। তাঁহার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কেবল পত্রেই শেষ হয় নাই, কবির অমর “চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলীতে” জ্বলন্ত দিব্যাক্ষরে এখনও তাহা জাজ্বল্যমান। বিদ্যাসাগরের দাতৃত্ব কবির মর্ম্মে মর্ম্মে উচ্ছ্বসিত। সে মর্মোচ্ছ্বাস চৌদ্দ ছত্রের অক্ষরে অক্ষরে প্রকাশিত। বিদ্যাসাগরের সহস্র সহস্র গুণ ছিল সত্য; কিন্তু মাইকেল দাতৃত্বের পূর্ণ পরিচয় পাইয়াছিলেন, প্রথমেই বিদেশে (বিলাতভূমিতে) অতি বড় সঙ্কটে। তাই কৃতজ্ঞ কবি সেই “দাতৃত্বের” যেন একটা বিবাট সজীব মূর্তি সম্মুখে গড়িয়া, তাহাতে তন্ময় হইয়া, কাতর কণ্ঠে সপ্ত সুর চড়াইয়া মুক্ত প্রাণে মুক্তোচ্ছ্বাসে গাহিয়াছিলেন,—

“বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে;