পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাইকেল মধুসূদন।
৩৮৩

 কোনরূপ দুরভিসন্ধিবশে মাইকেল যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ঋণপরিশোধ করেন নাই, তাহা নহে; প্রকৃতপক্ষে তিনি শণ পরিশোধে অপারগ ছিলেন। এই অপারগতার মুল কারণ অতীব অমিতব্যয়িতা। একে অমিতব্যয়ী, তাহার উপর উপার্জ্জনের তিনি সম্পূর্ণ অমনোযোগী ছিলেন, শুনিয়াছি অনেক সময় বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহাকে জোরজবরদস্তী করিয়া আদালতে পাঠাইয়া দিতেন। এরূপ না হইলে তাঁহাকে অকালে আলিপুরের দাতব্য হাসপাতালে দীন হীন কাঙ্গালের মত দারুণ মনস্তাপে প্রাণত্যাগ করিতে হইবে কেন?[১]মাইকেল ঋণ পরিশোধে অপারগ বলিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় তজ্জন্য আদৌ চিন্তা করিতেন না। যাঁহার জন্য মলিন মাতৃভাষার এতাদৃশ মুখ উজ্জ্বল, তাঁহার সাহায্যার্থ অর্থব্যায় করিয়া সে অর্থের প্রতিশোধ প্রত্যাশা না করিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় জন্মভূমির কৃতজ্ঞ পুত্রের কার্য্য করিয়াছিলেন। ঋণ পরিশোধ না হউক, কাব্যে সাহিত্যসংসারে মাইকেল জন্মভূমির বহুঋণ পরিশোধ করিয়া পুণ্য সঞ্চয় করিয়াছিলেন।


  1. ১২৮৯ সালের ১৬ই আষাঢ় বা ১৮৭৩ খৃষ্টাব্দে ১৯শে জুন রবিবার বেলা দুটার সময় তাঁহার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর দুই এক বৎসর পূর্ব্বে হইতে মাইকেল, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বক্ষঃস্থল হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছিলেন। তিনি নিজের স্বভাবের দোষাতিরেকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিষ্ণুতার সীমা মধ্যে স্থির হইয়া থাকিতে পারেন সাই। মাইকেল শেষে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত আদৌ সদ্ব্যবহার করেন নাই। একবার বিদ্যাসাগর মহাশয় মাইকেলকে “বাবু” সম্বোধন করিয়া পত্র লিখিয়াছিলেন। মাইকেল সে পত্র প্রত্যাখান করেন। অতঃপর বিদ্যাসাগর মহাশষ বিলাতফেরত বাঙ্গালীদিগকে বড় শ্রদ্ধা করিতেন না।