পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১০
বিদ্যাসাগর।

পাইয়া সসম্ভ্রমে দণ্ডায়মান হইলে, তিনি বলিতেন,—“তুমি পড়াইতে পড়াইতে উঠিও না; তোমার কর্ত্তব্য তুমি পালন কর। আমার খাতির করিতে গিয়া, তোমার যেন কর্ত্তব্য-ত্রুটি না হয়।” কখনও কোন ছাত্রকে নিদ্রিত দেখিলে, তিনি তাহাকে স্থানান্তরে নিদ্রা যাইবার ব্যবস্থা করিয়া দিতন। স্কুল-পরিদর্শনে তাঁহার নিয়মিত কোন সময় ছিল না; কাজেই ছাত্র, অধ্যাপক, সকলকেই সতত সাধানে থাকিতে হইত। সেই জন্য কোন ক্রমে কোন সময়ে কাহারও কোন বিষয়ে অমনোযোগিতার সম্ভাবনা ছিল না। শিক্ষার চরমোৎকর্ষও সেই সঙ্গে হইযাছিল। স্কুলের শিক্ষক বা অধ্যাপক কান কার্য্যসূত্রে স্কুলের কার্য্যান্তে বাড়ীতে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইলে, তিনি সর্বকর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া সর্বাগ্রে তাঁহাকে জলযোগ করাইতেন। এমন শুনিয়াছি যে, তিনি স্বহস্তে আম কাটিয়া খাওয়াইতেন। স্কুলের কোন ভৃত্যের কোনরূপ অসুখ হইলে সর্ব্বকর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া তিনি তাহার চিকিৎসা করাইতেন। বিদ্যালয়ের পুরাতন দ্বারবান কাশীর একটা বিষম স্ফোটকে মৃত্যু হইয়াছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়কে কাশী তাহার ব্যারামের কথা আদৌ জানায় নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহার মৃত্যুর পর, তাহার ব্যারামের কথা জানিতে পারিয়াছিলেন। ইহার পর হইতে তিনি স্কুলের কর্ম্মচারিবর্গের চিকিৎসার্থ এক জন ডাক্তার নিযুক্ত করিয়াছিলেন। এইরূপ তাঁহার অকৃত্রিম সহৃদয়তায় এবং শিক্ষাপ্রণালীর সুশৃঙ্খলায় তাঁহার বিদ্যালয় প্রকৃতপক্ষে সবিশেষ প্রতিপত্তিশালী হইয়াছিল। এ প্রতিপত্তিরও মূলাধার, বিদ্যাসাগরের সাহস, উদ্যম, উৎসাহ ও একাগ্রতা।