পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৭৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-কথা।
৬৯৫

হন। বিদ্যাসাগর মহাশয় সে সময়ে ইঁহাকে অনেক টাকা দিয়া সাহায্য করিয়াছিলেন। ইংলণ্ডে ও ফান্সে অবস্থিতিকালে মধুসূদন “চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী” রচনা করেন।

 ব্যারিষ্টারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া মধুসূদন ১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দে কালিকাতায় আগমন করিলেন ও ব্যবসায় করিবার জন্য হাইকোর্টে প্রবেশ করিলেন। এই সময়ে ইনি “নীতিমূলক কবিতা মালা,” “হেক্টর বধ” (গদ্য) ও “মায়াকানন” (নাটক) কেবল অর্থোপার্জ্জন কল্পে প্রণয়ন করিয়াছিলেন। অমিতব্যয়িতা নিবন্ধন কবির শেষ জীবন বড়ই দুঃখময় হইয়াছিল। পত্নীর মৃত্যুর পর মধুসূদন স্বয়ং রুগ্ন শয্যায় শয়ন করিলেন; কিন্তু চিকিৎসা করাইবার সঙ্গতি নাই। অর্থাভাবে পথ্যও জুটিয়া উঠিত না। এবংপ্রকার নানাবিধ কষ্টভোগের পর ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৯শে জুন আলিপুরের দাতব্য চিকিৎসালয়ে কবিবরের প্রাণবায়ু বহির্গত হয়। ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দের ১লা ডিসেম্বর স্বৰ্গীয় মনোমোহন ঘোষের যত্নে ইঁহার সমাধিস্থানের উপর একটা মর্ম্মর বেদী নির্ম্মিত হইয়া সাধরণের সমক্ষে উন্মুক্ত হয়। ইঁহার কবরের উপর বাঙ্গালা অক্ষরে “দাঁড়াও পথিকবর” প্রমুখ যে কবিতাটা খোদিত আছে, তাহা মধুসুদন জীবিত কালে নিজের জন্যই রচনা করিয়া রাখিয়াছিলেন।

 মধুসূদন বঙ্গভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্ত্তক। বঙ্গভাষায় যে বীররস-প্রধান কাব্য (Heroic poem) রচনা করা যায়, তাহা ইনিই প্রথম প্রদর্শন করেন। ভাষার উন্নতি করিয়া মধুসুদন বঙ্গবাসীর চিরকৃতজ্ঞতাভাজন হইয়াছেন।