পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
বিদ্যাসাগর।

পূর্ব্ব বারে সঙ্গে ভৃত্য ছিল। ভৃত্য মধ্যে মধ্যে বালককে কাঁধে করিয়া আনিয়াছিল। এবার পিতা জিজ্ঞাসিলেন,—“কেমন ঈশ্বর! তুমি চলিয়া যাইতে পরিবে, না আনন্দরামকে সঙ্গে করিয়া লইব?” বালক বাহাদুরী করিয়া বলিল,—“ন, আমি চলিয়া যাইতে পারিব।” বিদ্যাসাগরের বাহাদুরীর পরিচয় বাল্য কাল হইতে।

 এবার পিতাপুত্রে চলিয়া আসিয়া প্রথম দিন পাতুলগ্রামে আশ্রয় লন। পাতুলগ্রাম বীরসিংহ হইতে ছয় ক্রোশ দুর। ঈশ্বরচন্দ্রের এ দিন চলিতে কষ্ট হয় নাই। তারকেশ্বরের নিকট রামনগর গ্রামে ঠাকুরদাসের কনিষ্ঠ ভগিনী অন্নপূর্ণাকে দেখিতে যাইবার প্রয়োজন হয়। তিনি তখন পীড়িতা ছিলেন। রামনগর পাতুলগ্রাম হইতে ছয় ক্রোশ দূরবর্তী। পিতাপুত্রে দুই জনে প্রাতঃকালে রামনগর অভিমুখে যাত্রা করেন। তিন ক্রোশ পথ গিয়া,ঈশ্বরচন্দ্র আর চলিতে পারেন নাই। পা টাটাইয়া ফুলিয়া যায়। পিতা বড়ই বিপদগ্রস্ত হন। তখন বেলা দুই প্রহরের অধিক। ঈশ্বরচন্দ্র তখন এক রকম চলচ্ছক্তিলীন। পিতা বলিলেন—“বাবা! একটু চল, আগে মাঠে ফুট তরমুজ খাওয়াইব।” ঈশ্বরচন্দ্র অতি কষ্টে প্রাণপণে ইটো অগ্রসর হইয়াছিলেন। সেই মাঠের কাছে গিয়া ফুটতরমুজ খাইলেন। পেটু ঠাণ্ডা হইয়াছিল বটে; পা কিন্তু আর উঠে নাই। পিতা রাগ করিয়া পুত্রকে ফেলিয়া কিয়দুর চলিয়া যান; কিন্তু আবার ফিরিয়া আসিয়া রোরুদ্যমান পুত্রকে কঁধে করিয়া লন। দুর্ব্বলদেহ পিতা। অষ্টম বর্ষের বলবান বালককে কত দূর কাঁধে করিয়া লইয়া যাইবেন? খানিক দূর গিয়া আবার তিনি ঈশ্বরচন্দ্রকে কাঁধ