পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

তাঁহারা শবকে মেডিকেল কলেজে লইয়া যাইবেক। তথায় পরীক্ষাকার্য্য সমাধা হইলে পর, সেই মৃত-দেহ নিমতলার ঘাটে দাহ-কারণ লইয়া যাইতে হইবে। উদ্বন্ধনে প্রাণত্যাগ করিয়াছে বলিয়া, আমাদের পাড়ার কোন ব্রাহ্মণ দাহ করিতে যাইতে স্বীকার পাইতেছেন না; আর মুদ্দফরাসের দ্বারা বহন করিয়া লইয়া গেলে, দুর্নাম ও জাতিনাশ হইবে। বিদ্যাসাগর মহাশয়, উক্ত শব-বহন-কারণ অনেককে অনুরোধ করেন, কিন্তু কেহই সম্মত হয় নাই; পরিশেষে ভ্রাতা ঈশানচন্দ্র, পিতৃব্যপুত্র পীতাম্বর, মাতুলপুত্র ঈশ্বর ঘোষাল, ভগিনীপতি যদুনাথ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি আট জনকে প্রেরণ করেন। উঁহারা তাঁহার বাটী হইতে শব বহন করিয়া, মেডিকেল কলেজে লইয়া যান; তথায় পোষ্টমর্টন অর্থাৎ পরীক্ষার পর, পুনরায় নিমতলার ঘাটে লইয়া গিয়া, দাহাদিকার্য্য সম্পন্ন করেন।

 ঐ সময় বিদ্যাসাগর মহাশয়কে প্রতি সপ্তাহের মধ্যে একদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবারে ছোট লাট হেলিডে সাহেব বাহাদুরের বাটী যাইতে হইত। তিনি তাঁহাকে চটি জুতা, থানের ধুতি ও ধানের চাদর এই তিনের পরিবর্ত্তে পেণ্টুলন, চাপকান, পাগড়ি, মোজা ও বুটজুতা পরিধান করিবার আদেশ দেন। অগ্রজ মহাশয়, অগত্যা কয়েকবার গোপনে সাহেবের কথিতমত পোষাক পরিধান করেন; কিন্তু উক্ত বেশ-ধারণে লজ্জিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধের ন্যায় ক্লেশ অনুভব করিয়া, লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণরের সমক্ষে বলেন, “আপনার সহিত আমার এই শেষ-দেখা, আমি এই বেশ ধারণ করিতে বা সং সাজিতে পারিব না, ইহাতে আমার চাকরি থাক্‌ বা যাক্।” ইহা শ্রবণ করিয়া লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর, দাদাকে তাঁহার,অভিলষিতবেশে আসিবার আদেশ দিলেন। তাঁহার আজীবনে এই কয়েকবার ভিন্ন চটিজুতা, থান ধুতি, ধানের চাদর পরিত্যাগ করেন নাই। পরে রোগ ও বার্ধক্য-নিবন্ধন চিকিৎসকের উপদেশে সময়ে সময়ে ফ্লানেলের জামা ও উড়ানি ব্যবহার করিতে দেখা গিয়াছে।

 বাবু শ্যামাচরণ বিশ্বাস ও বিমলাচরণ বিশ্বাস, অগ্রজের পরম বন্ধু ছিলেন।