পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

অন্তর্গত রাণীগোপালনগর, বাসুদেবপুর, মালঞ্চ, বদনগঞ্জ প্রভৃতি গ্রামে এবং ঐ জেলাস্থ অন্যান্য গ্রামে যাইয়া, বিদ্যালয়ের স্থান নিরূপণ করেন। তদনন্তর জেলা বর্ধমান জৌগ্রাম, মানকর প্রভৃতি গ্রামে যাইয়া এবং নদীয়া জেলায় মফঃস্বলের নানাগ্রামে যাইয়া, বিদ্যালয়ের স্থান মনোনীত করেন।

 উক্ত চারি জেলায় পরিভ্রমণকালে, পথে কেহ শারীরিক অসুস্থতাপ্রযুক্ত চলিতে অক্ষম হইয়া ভূমে পতিত আছে দেখিতে পাইলে, তিনি পাল্কী হইতে নামিয়া, ঐ পীড়িত অপরিচিত পথিককে নিজের পাল্কীতে তুলিয়া দিয়া, স্বয়ং পদব্রজে গমনপূর্ব্বক উহাকে তাহার বাটীতে অথবা বাটীর নিকটস্থ কোন বিপণীতে পঁহুছাইয়া দিতেন এবং পান্থনিবাসের অধিকারীকে তাহার আবশ্যক ব্যয়ের টাকা প্রদান করিতেন। এইরূপ বিপদাপন্ন যে সকল লোক তাঁহার দৃষ্টিপথে পড়িয়াছিল, তাহারা পরে আসিয়া অগ্রজকে পরিচয় দিত, এবং সেই সকল লোক তাঁহার পরম বন্ধু বলিয়া গণ্য হইত।

 মফঃস্বল পরিভ্রমণকালে, সমভিব্যাহারে চক্চ‌কিয়া টাকা, আধুলী, সিকি, দুয়ানি, পয়সা, যথেষ্ট রাখিতেন। পথে দরিদ্র লোক নয়নগোচর হইলে, উহা দিগকে অকাতরে দান করিতেন। পরিভ্রমণসময়ে অর্থব্যয় করিতে কখনই কুষ্ঠিত হইতেন না। একারণ, অনেকে তাঁহাকে বলিত যে, আপনাকে আমরা বিদ্যাসাগর না বলিয়া, দয়ার সাগর বলিব। মফঃস্বল-পরিভ্রমণসময়ে অনেক নিরুপায় বালক পুস্তক, বস্ত্র ও স্কুলের বেতনের জন্য তাঁহাকে ধরিত, তিনিও সকলেরই আশা পূর্ণ করিতেন। প্রতিমাসেই উক্ত নিরাশ্রয় বালকদিগের সাহায্য করিতেন, কখনই বিস্মৃত হইতেন না। একদিন তিনি নিবদো দত্তপুকুরনিবাসী বাবু কালীকৃষ্ণ দত্তের বাটীতে গিয়াছিলেন; তথায় ক্ষেত্রনামক এক ব্রাহ্মণবালক অধ্যয়ন করিতে পান না শ্রবণ করিয়া, উহাকে সমভিব্যাহারে আনয়ন করেন এবং কলিকাতার বাসায় অন্ন-বস্ত্র দিয়া সংস্কৃত-কলেজে প্রবিষ্ট করিয়া দেন। অন্ততঃ ১২ বৎসর কাল তাহাকে বাসায় রাখিয়া বিদ্যাশিক্ষা করান। সম্প্রতি ঐ ব্যক্তি সম্ভ্রান্ত বলিয়া পরিগণিত হইয়াছেন। বারাসত-