পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

যাত্রা পরিত্রাণ পাই, নচেৎ আমায় আত্মহত্যা করিতে হয়।” তাহা শুনিয়া, অগ্রজ অতিশয় দুঃখিত হইলেন। নিজের টাকা না থাকা প্রযুক্ত অপরের নিকট ঋণ করিয়া ৫০০৲ টাকা দিলেন। তাহার পর এই দীর্ঘকালের মধ্যে জগন্মোহন তাঁহার সহিত আর কখন সাক্ষাৎ করিলেন না।

 জাহানাবাদের সন্নিহিত কোন গ্রামে এক ভট্টাচার্য্য মহাশয়, অগ্রজের নিকট উপস্থিত হইয়া বিষণ্ণ-বদনে রোদন করিতে করিতে বলেন, “বাবা ঈশ্বর! বড়বাজারের রামতারক হালদারের নিকট ২০০৲ টাকা ঋণ করিয়া সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিয়াছি; তাহারা টাকা না পাইয়া, আমার নামে অভিযোগ করিয়া জয়লাভ করিয়াছেন এবং ত্বরায় আমাকে নাতক করিয়া, অপমানিত করিবার উদেযাগে আছেন; কিসে পরিত্রাণ পাই? তাঁহার কাতরতাদর্শনে আমার হস্তে দাবীকৃত সমস্ত টাকা দিয়া, তাঁহাকে আমার সঙ্গে বড়বাজারের মহাজনের দোকানে প্রেরণ করেন। উত্তমর্ণ, আমার নিকট দাবীকৃত উক্ত টাকা লইয়া, তাঁহাকে অব্যাহতি দেন।

 অগ্রজ মহাশয় কেবল দরিদ্রগণকে সাহায্য করিতেন, এমন নহে; বন্ধুবান্ধবেরা বিপদে পড়িলেও তিনি অকাতরে অর্থসাহায্য করিতেন। ঐ সকল টাকা পরে ফেরৎ পাইব, কখন এরূপ আশা করিতেন না ও চাহিতেন না। তিনি এই মনে করিতেন যে, আমি বন্ধুদিগের বিপদে সাহায্য করিতেছি, পরে তাঁহাদের সময় ভাল হইলে, ইচ্ছা হয় তাঁহারা স্বয়ং প্রত্যাৰ্পণ করিবেন। দুঃখের বিষয় এই যে, দুই একজন ভিন্ন কেহই তাহা ফেরৎ দেন নাই। কিন্তু দাদাও তাঁহাদিগকে কখনও টাকার কথা বলেন নাই।

 সন ১২৭০ সালের ১০ই ফান্তন কলিকাতায় একটি বিধবা ব্রাহ্মণতনয়ার পাণিগ্রহণ-বিধি সমাধা হয়। ইহাঁদের নিবাস ঢাকা জেলা।

 সন ১২৭১ সালের ১২ই মাঘ কলিকাতায় একটি বৈদ্যজাতীয় বিধবার বিবাহ-কার্য্য সমাধা হয়। বর জগচ্চন্দ্র দাসগুপ্ত, নিবাস পরগণা বিক্রমপুর মধ্যপাড়া, জেলা ঢাকা।