পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করিতেন। বোধ করি, তাহা আপনি বিস্মৃত হইয়া থাকিবেন। এক্ষণে আমি কষ্টে পড়িয়াছি, আমার স্বামীর যাহা আয় আছে, তৎসমস্তই তিনি ব্রাহ্মণভোজনাদি সৎকার্য্যে ব্যয় করিয়া থাকেন। এক্ষণে আমাদের অনেক ঋণ হইয়াছে, তজ্জন্য বিশেষ ভাবিত হইয়াছি; এ কথা অন্যের নিকট প্রকাশ করি নাই। আপনি পিতৃব্য-তুল্য, আপনি আমার ভ্রাতা, ভুবনমোহন সিংহকে মাসে মাসে ৩০৲ টাকা মাসহরা দিতেছেন, তাহাতে তাঁহার সাংসারিক কষ্ট নিবারণ করিয়াছেন।” এই সকল কথা শুনিয়া অগ্রজের চক্ষের জলে বক্ষঃস্থল ভাসিয়া গেল, এবং তিনি বলিলেন, “আমরা তোমার পিতামহ ও তোমার পিতার কতই খাইয়াছি। বাল্যকালে তোমার জননী ও পিতৃঘসা রাইদিদি, আমাকে পুত্রবৎ স্নেহ করিয়াছেন। তাঁহাদের যত্নেই বাল্যকালে কলিকাতায় অবস্থিতি করিতে পারিয়াছিলাম। তদবধি তিনি ক্ষেত্রমণিকে মাসিক ১০৲ টাকা দিতেন, এবং ঋণ পরিশোধের জন্যও তৎকালে কিছু কিছু পাঠাইয়াছিলেন।

 পূর্ব্বে পাইকপাড়ার রাজাদের সহিত যখন তাঁহার প্রথম আলাপ হয়, তৎকালে তিনি মধ্যে মধ্যে পাইকপাড়া যাইতেন। একদিন বৈকালে গাড়ীতে যাইতেছিলেন, রাজবাটীর নিকট একজন মুদি ডাকিতে লাগিল, “ঈশ্বর-খুড়া, এদিকে কোথায় যাইতেছ?” তাহা শুনিয়া অগ্রজ মহাশয় গাড়ী থামাইলেন। সেই দরিদ্র মুদি বলিল, “ঈশ্বর-খুড়া ভাল আছ?” তাহাতে অগ্রজ বলিলেন, “হাঁ রামধন-খুড়া।” রামধন, দাদাকে বসিবার জন্য দূর্ব্বাঘাসের উপর একটা চট বিছাইয়া দিলে, তিনি তাহাতে বসিয়া, একটা খেলো হুঁকায় তামাক খাইতেছেন, এমন সময়ে, রাজাদের বাটীর কয়েকটি বাবু গাড়ীতে চড়িয়া হাওয়া খাইতে যাইতেছিলেন। তাঁহাকে দেখিয়া উহারা আশ্চর্য্যান্বিত হইলেন যে, বিদ্যাসাগর মহাশয় সামান্য একজন ইতর মুদির দোকানের সম্মুখভাগে রাস্তার ধারে বসিয়া, উহার সহিত গল্প ও হাস্য করিতেছেন। বাবুরা বেড়াইয়া যখন প্রত্যাগমন করেন, তিনি তখনও ঐ স্থানে বসিয়া আছেন দেখিয়া, বাবুরা মুখ