পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২০৫

তিনি রোগীদের বাটীতে বাটীতে ঔষধ দিয়া বেড়াইতেন। ঐ ডাক্তারের ১৫৲ টাকা বেতন বিদ্যাসাগর মহাশয় দিতেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় দুই বৎসরকাল বৰ্দ্ধমানে ছিলেন। তিনিও জরাক্রান্ত হইতে পারেন, তাঁহার এ আশঙ্কা কখনও হয় নাই। বৰ্দ্ধমানের লোকে বলিয়া থাকেন, “বিদ্যাসাগর, নির্ম্মল চরিত্রের লোক, তাঁহার রাগদ্বেষ দেখি নাই, তাঁহার শরীর দয়া ও স্নেহে পরিপূর্ণ। তাঁহার মাতৃভক্তি, পরদুঃখকাতরতা ও দানশীলতা অনুপমেয়। তাঁহাকে অপরের মনে কষ্ট দিতে দেখি নাই। তাঁহার সকল বিষয়েই উদারতা দেখিয়াছি।”

 মধ্যে মধ্যে যখন তাঁহার পাচক-ব্রাহ্মণ থাকিত না, তখন রাত্রিকালে বাবু প্যারীচরণ মিত্রের বাটী হইতে তাঁহার আহারের সামগ্রী যাইত। এই সময়ে তিনি ভ্রান্তিবিলাস নামক একখানি পুস্তক লিখেন। বাবু প্যারীচরণ মিত্র মহাশয়ের সহিত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অত্যন্ত বন্ধুত্ব ছিল। সেই কারণে তিনি তাঁহার ভ্রাতুষ্পপুত্র গঙ্গানারায়ণ বাবু প্রভৃতিকে বাৎসল্যভাবে দেখিতেন।

 বিগত ৭৩ সালের দুর্ভিক্ষসময়ে যে সকল লোক অন্নসত্রে ভোজন করিয়াছিল, তাহারা এক্ষণে কি উপায় অবলম্বন করিয়া দিনপাত করিয়া থাকে, অগ্রজ মহাশয় ঐ সকল গ্রামস্থ দরিদ্র লোকের অবস্থা অবগত হইবার জন্য ব্যগ্র হইলেন; তজ্জন্য তাঁহাকে ঐ সকলের সবিশেষ পরিচয় দেওয়া হয় যে, উহাদের মধ্যে অনেকেই অতিকষ্টে একসন্ধ্যা ভোজন করিয়া থাকে। ইহা শ্রবণ করিয়া অগ্রজ মহাশয়, জননী-দেবীকে বলেন, “বৎসরের মধ্যে এক দিন পূজা করিয়া ছয় সাত শত টাকা বৃথা ব্যয় করা ভাল, কি গ্রামের নিরুপায় অনাথ লোকদিগকে ঐ টাকা অবস্থানুসারে মাসে মাসে কিছু কিছু সাহায্য করা ভাল?” ইহা শুনিয়া জননীদেবী উত্তর করেন, “গ্রামের দরিদ্র নিরুপায় লোক প্রত্যহ খাইতে পাইলে, পূজা করিবার আবশ্যক নাই। তুমি গ্রামবাসীদিগকে মাসে মাসে কিছু কিছু দিলে, আমি পরম আহলাদিত হইব।” জননীদেবীর মুখে