পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।
৩০

মহাশয় তাঁহার প্রতি অতিশয় সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। তর্কালঙ্কার মহাশয়, বাঙ্গালা দেশের সকল পণ্ডিত অপেক্ষা কাব্য-শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন সত্য বটে; কিন্তু ছাত্রগণকে পড়াইবার সময়, যে কবিতার অন্বয় করিতেন, তাহার অর্থ বলিতেন না, যাহার অর্থ ও ভাব বলিতেন, তাহার অন্বয় করিতেন না; সুতরাং যে সকল ছাত্র ব্যাকরণে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করিতে পারে নাই, তাঁহাদের পক্ষে তর্কালঙ্কার মহাশয়ের নিকট অধ্যয়ন করিয়া কিছুমাত্র ফলোদয় হইত না। অগ্রজ মহাশয়ের ব্যাকরণে বিশিষ্টরূপ বুৎপত্তি জন্মিয়াছিল। বিশেষতঃ ভট্টিকাব্যের প্রথম হইতে পঞ্চম সৰ্গ ও প্রায় ৫০০ শত উদ্ভটকবিতা ভালরূপ কণ্ঠস্থ ছিল; এজন্য তাঁহার নিকট শিক্ষা-বিষয়ে ইহার কোন অসুবিধা ঘটে নাই। প্রথম বৎসর রঘুবংশ, কুমারসম্ভব, রাঘবপাণ্ডবীয় প্রভৃতি সাহিত্য গ্রন্থ অধ্যয়ন করিয়া, বার্ষিক-পরীক্ষায় সর্বোৎকৃষ্ট হইয়া প্রধান পারিতোষিক প্রাপ্ত হন। তৎকালে পুস্তক-পারিতোষিকেরই ব্যবস্থা ছিল। দ্বিতীয় বৎসরে মাঘ, ভারবি, মেঘদূত, শকুন্তলা, উত্তরচরিত, বিক্রমোর্বিশী, মুদ্রারাক্ষস, কাদম্বরী, দশকুমারচরিত প্রভৃতি মুখস্থ করিয়া, সাহিত্যশাস্ত্রে বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। তৎকালে রবিবারে কলেজ বন্ধ হইত না। অষ্টমী ও প্রতিপদে সংস্কৃত অনুশীলন নিষেধ ছিল; এজন্য উক্ত দিবসদ্বয় কলেজ বন্ধ থাকিত। দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দ্দ‌শী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় নূতন পাঠ বন্ধ থাকিত; একারণ ঐ কয়েক দিবস সংস্কৃত-রচনা-শিক্ষার অনুশীলন হইত। কোন দিন সংস্কৃত হইতে বাঙ্গালা অনুবাদ, কোন দিন বাঙ্গালা হইতে সংস্কৃত অনুবাদ হইত। অগ্রজ মহাশয়, সকল ছাত্র অপেক্ষা ভাল অনুবাদ করিতে পারিতেন। বিশেষতঃ তাঁহার ব্যাকরণভুল বা বর্ণাশুদ্ধি আদৌ হইত না। একারণ অধ্যাপক তর্কালঙ্কার মহাশয়, তাঁহাকে অত্যন্ত ভাল বাসিতেন। তিনি কাব্য বা নাটক যাহা অধ্যয়ন করিতেন, তাহাই প্রায় কণ্ঠস্থ করিতেন। তাঁহার ন্যায় স্মরণশক্তি কোন ছাত্রেরই ছিল না। নাটকের প্রাকৃত-ভাষা প্রায় তাঁহার কণ্ঠস্থ ছিল। একারণ, যেমন সংস্কৃত