পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪o
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

ল-কমিটির সার্টিফিকেট-প্রাপ্তির কিয়দ্দি‌বস পরে, ত্রিপুরাজেলার জজ্‌-পণ্ডিতের পদ শূন্য হইলে, অগ্রজ মহাশয় ঐ পদ-প্রাপ্তির প্রার্থনায় আবেদন করেন। অগ্রজকে ঐ কার্য্যে নিযুক্ত করিবার জন্য গবর্ণমেণ্ট এই নিয়োগ-পত্র দেন যে, তুমি ত্বরায় ত্রিপুরায় আসিয়া কার্য্যে প্রবৃত্ত হও। কিন্তু পিতৃদেবের অসম্মতি-নিবন্ধন তাঁহার ঐ কার্য্যে যাওয়া ঘটিল না।

 এখনকার মত তৎকালে থিয়েটার বা হাপ্‌ আখড়াই প্রভৃতি ছিল না। তৎকালে কলিকাতায় কবি ও কৃষ্ণযাত্রা হইত। দাদার কবি শুনিবার অত্যন্ত সখ ছিল; কোথাও কবি হইলে তিনি শুনিতে যাইতেন। যখন দেশে যাইতেন, তখন সমবয়স্ক ভাই বন্ধু লইয়া কবি গান করিতেন।

 আত্মীয় লোকের পীড়া হইলে, মাতৃদেবীর অনুকরণে তিনিও তাঁহাদের বাটীতে যাইয়া, শুশ্রূষাদি-কার্য্যে প্রবৃত্ত হইতেন; এরূপ কার্য্যে তাঁহার কিছুমাত্র ঘৃণা ছিল না। নিঃসম্পৰ্কীয় অর্থাৎ কোনরূপ সংস্রব না থাকিলেও, পীড়িত-লোকের মলমূত্র স্বহস্তে পরিষ্কার করিতেন। পীড়িত-লোকের শুশ্রষাদি-কার্য্যে ব্যাপৃত থাকিয়া, সমস্ত রাত্রি জাগরণ করিতেন। যে সকল সংক্রামক-রোগাক্রান্ত রোগীকে অপরে স্পর্শ করিতেও ভীত হইত, তিনি নির্ভয়ে ও অসঙ্কুচিতচিত্তে সেই সকল রোগীর শুশ্রূষাদিকার্য্যে লিপ্ত থাকিতেন। তিনি বাল্যকাল হইতেই পরম দয়ালু ছিলেন। তাঁহার এবম্বিধ গুণ থাকায়, তৎকালে তিনি কলেজের সকল শিক্ষক ও ছাত্রবৃন্দের পরম প্রিয়পাত্র ছিলেন।

 বৈকালে, কলেজের নিকট ঠন্‌ঠনিয়ার চৌমাথার কিছু পূর্বে, বিপ্রদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিঠাইয়ের দোকান ছিল। তথায় কলেজের ছুটির পর জল খাইতেন। কলেজের যে কোন ছাত্র সম্মুখে থাকিত, সকলকেই মিষ্টান্ন খাওয়াইতেন। তিনি মাসিক যে ৮৲ টাকা বৃত্তি পাইতেন, তাহা অপরাপর বালককে বৈকালে জল খাওয়ানতেই খরচ হইত। এতদ্ভিন্ন কলেজের দ্বারবান্‌দের নিকটও যথেষ্ট টাকা ধার করিতেন। যে সকল বালকের বস্ত্র‌ জীণ দেখিতেন, ঐ ধার করা টাকায় সেই সকল বালকের বস্ত্র ক্রয় করিয়া দিতেন।