পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাকরি।
৭৫

কহিলেন, বাঙ্গালার মধ্যে পণ্ডিত বিদ্যাসাগরের মত তেজস্বী লোক আমার দৃষ্টিগোচর হয় নাই; এই কারণেই আমরা, সকল বাঙ্গালী অপেক্ষা পণ্ডিতকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি করিয়া থাকি। বাঙ্গালায় বিদ্যাসাগরের সদৃশ আর দ্বিতীয় লোক নাই। ময়েট্ সাহেব যতদিন শিক্ষা-সমাজের অধ্যক্ষ ছিলেন, ততদিন বিদ্যাসাগরের সহিত পরামর্শ না করিয়া কোন কার্য্য করিতেন না।

 ইং ১৮৪৬ সালে, পূজ্যপাদ জয়গোপাল তর্কালঙ্কার মহাশয় মানবলীলা সংবরণ করিলে, সংস্কৃত-কলেজের সাহিত্য-শাস্ত্রের অধ্যাপকের পদ শূন্য হয়। সংস্কৃত-কলেজের সেক্রেটারি বাবু রসময় দত্ত মহাশয়, অগ্রজ মহাশয়কে ঐ পদে নিযুক্ত করিবেন, স্থির করিয়াছিলেন। এই সময়ে অগ্রজ, সংস্কৃত-কলেজে আসিষ্টাণ্ট সেক্রেটারির পদে নিযুক্ত ছিলেন। কোনও বিশেষ কারণবশতঃ তিনি অধ্যাপকের পদগ্রহণে অসম্মত হইয়া, মদনমোহন তর্কালঙ্কারকে নিযুক্ত করিবার নিমিত্ত সবিশেষ অনুরোধ করেন। তৎকালে মদনমোহন তর্কালঙ্কার মাসিক ৫০৲ টাকা বেতনে কৃষ্ণনগর কলেজে প্রধান পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত ছিলেন। অগ্রজের যত্নে মদনমোহন তর্কালঙ্কার উক্ত পদে নিযুক্ত হন। জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই, সর্ব্বানন্দ ন্যায়বাগীশ সাহিত্যশ্রেণীর প্রতিনিধিরূপে কার্য্য করিতেছিলেন। ন্যায়বাগীশ মহাশয়, পূর্ব্বের ন্যায় প্রত্যহ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হইয়া চেয়ারে বসিয়া নিদ্রা যাইতেন, অনবরত নস্য লাইতেন, তথাপি নিদ্রা উহাকে পরিত্যাগ করিত না। এই কারণে ছাত্রেরা এই কবিতাটিী পাঠ করিতেন-“সর্ব্বানন্দন্যায়বাগীশো ভায়া নিত্যং নিদ্রাং যাতি কলেজমধ্যে। ধীরে নাম্না ধ্যাপনা নাস্তি তস্য চত্বারিংশম্মুদ্রিকাণাং গতেহপি।” তিনি ছাত্রগণকে পড়াইবার সময় কেবল মল্লিনাথের টীকাগুলি আবৃত্তি করিয়া দিতেন। কবিতার ভাব, অর্থ কি অন্বয় বলিয়া দিতেন না; তজ্জন্য ছাত্রগণের মনস্তুষ্টি হইত না।. তিনি শিক্ষক থাকিলে, আগামী বর্ষে বাৎসরিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হইবার আশা নাই, এই বিবেচনায়, সাহিত্যশ্রেণীর ছাত্রগণ আসিষ্টাণ্ট সেক্রেটারিকে সমস্ত বিবরণ অবগত করাইয়াছিল এবং শিক্ষাসমাজের অধ্যক্ষ