পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

এবং লেখাপড়ায় বিরত হইয়াছিলেন। আমরা সাত ভাই; এজন্য জ্যেষ্ঠাগ্রজ সর্ব্বদা বলিতেন যে, যদ্যপি সকলে জীবিত থাকি, তবে দেশের অনেক উপকার করিতে পারিব। তিনি মনে মনে সংকল্প করিয়াছিলেন, নিজে উপাৰ্জ্জ ন করিয়া সংসারযাত্রা নিৰ্বাহ করিব; অন্যান্য ভ্রাতৃবৰ্গকে দেশে রাখিয়া, বিদ্যালয় স্থাপন-পূর্ব্বক, দেশের দরিদ্র লোকের সন্তানগণকে লেখাপড়া শিখাইব। কিন্তু উপর্য্যুপরি দুই বৎসরে দুইটি ভ্রাতার মৃত্যুতে তিনি হতাশ হইয়াছিলেন। হরিশ্চন্দ্র ইতিপূর্ব্বে বলিয়াছিল যে, “দাদা! আমার বিবাহে বাজনা করিতে হইবে।” এজন্য অদ্যাপি অগ্রজ, অপর লোকের বিবাহে বাদ্যের শব্দ শুনিলে, দীর্ঘ-নিশ্বাস-পরিত্যাগপূর্বক অশ্রুবিসর্জন করিতেন। লোকপরম্পরায় শুনিলেন যে, জননী-দেবী পুত্রদ্বয়ের মৃত্যুতে সর্ব্বদা রোদন করিয়া থাকেন; এজন্য জননীদেবীকে দেশ হইতে কলিকাতায় লইয়া আইসেন এবং পাচ মাস কাল নিকটে রাখিয়া সান্ত্বনা করেন। জননী, দেশে থাকিয়া স্বয়ং পাকাদিকার্য্য নির্ব্বাহ করিয়া, অপরাপর আগন্তুক ব্যক্তিগণকে বা দরিদ্র নিরুপায় লোকদিগকে ভোজন করাইতে ভাল বাসিতেন। তাঁহাকে অন্যমনস্ক করিয়া রাখিবার জন্য, তিনি সর্বদা আত্মীয় ও বন্ধুগণকে নিমন্ত্রণ করিয়া আনিতেন। জননী, স্বয়ং পাকাদি কার্য্য নির্বাহ করিয়া, উপস্থিত নিমন্ত্রিতদিগকে খাওয়াইতেন। রন্ধন-পরিবেশনাদি-কার্য্যে ব্যাপৃত থাকায়, তাঁহার শোকের অনেক লাঘব হইতে লাগিল। জননীকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য তিনি পাঁচ মাস কাল অকাতরে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করিয়াছিলেন। কিয়ৎপরিমাণে শোকের হ্রাস হইলে পর, বৈশাখ মাসে অন্যান্য ভ্রাতৃবৰ্গসহিত জননীকে দেশে পাঠাইয়া দেন। ঐ সময়ে অগ্রজের পুত্র নারায়ণের বয়ঃক্রম ছয় মাস; তাহার অন্নপ্রাশন উপলক্ষে পিতৃদেব সমারোহ করিয়া, আত্মীয়গণকে নিমন্ত্রণ করিয়া আনাইয়াছিলেন। অগ্রজ, তৎকাল পর্য্যন্ত মৃত হরিশ্চন্দ্র ভ্রাতার শোক সংবরণ করিতে পারেন নাই; কেবল পিতার অনুরোধে দেশে গমন করেন। দেশে অবস্থিতির সময় মনে মনে চিন্তা করিলেন যে, অল্পবয়স্ক বালকবালিকাগণ প্রথম, দ্বিতীয় ও