পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

... a -------------ar-aparesas, is ত্ৰিদেব সম্বন্ধে বিজ্ঞানশাস্ত্ৰ কি বলে * প্রচলিত হিন্দুধৰ্ম্মের শিরোভাগ এই যে, ঈশ্বর এক, কিন্তু তিনটি পৃথক পৃথক মূৰ্ত্তিতে তিনি বিভক্ত। এক সৃজন করেন, এক পালন করেন, এবং এক ধ্বংস করেন। এই ত্রিদেব লোক-প্ৰথিত । জন ষ্টয়ার্ট মিলের মৃত্যুর পর, ধৰ্ম্মসম্বন্ধে তৎপ্রণীত তিনটি প্রবন্ধ প্রচারিত হইয়াছে। তাহার একটির উদ্দেশ্য, ঈশ্বরের অস্তিত্বের মীমাংসা করা । মিলের মত যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে যে সকল প্রমাণ ঈশ্বরবাদীরা প্রয়োগ করেন, তাহার মধ্যে একটিই সারবান। জগতের নিৰ্ম্মাণ-কৌশল হইতে র্তাহার মতে, নিৰ্ম্মাতার অস্তিত্ব সিদ্ধ হয়। এটি প্রাচীন কথা, এবং অখণ্ডনীয়ও নহে। ডার্বিনের মত প্রচারের পূর্বেও ইহার সদুত্তর ছিল ; এক্ষণে ডার্বিন দেখাইয়াছেন যে, এই নিৰ্ম্মাণকৌশল স্বতঃই ঘটে। মিলও ডার্বিনের এই মত অনবগত ছিলেন, এমত নহে ; তিনি স্বীয় প্ৰবন্ধ-মধ্যে তাহার উল্লেখ করিয়াছেন, এবং বলিয়াছেন যে, যদি এই মতটি প্রকৃত হয়, তবে উপরিকথিত নিৰ্ম্মাণকৌশল ঈশ্বরের অস্তিত্ব-প্ৰতিপাদক হয় না । কিন্তু ডাবিনের মত প্রচারের অল্পকাল পরেই মিলের প্রস্তাব লিখিত হয়। সে মতের সত্যাসত্য পরীক্ষিত এবং নির্বাচিত হওয়ার পক্ষে কালবিলম্বের প্ৰয়োজন। কালবিলম্বের সে ফল তিনি পান নাই । অতএব তিনি এই মতের উপর দৃঢ় রূপে নির্ভর করিতে পারেন নাই। নির্ভর করিতে পারিলে তঁহাকে স্বীকার করিতে হইত যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে কিছুই প্ৰমাণ নাই। এখনও অনেকে ডার্বিনের প্রতিবাদী আছেন-কিন্তু বহুতর পণ্ডিতগণ কর্তৃক তাহার মত আদৃত এবং স্বীকৃত। অধিকাংশ বিজ্ঞানবিদ এবং দর্শনবিদ পণ্ডিতেরা এক্ষণে ডার্বিনের মতাবলম্বী। কিন্তু ডার্বিনের মত প্ৰকৃত হইলেও ঈশ্বর নাই, এ কথা সিদ্ধ হইল না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে প্ৰমাণাভাব ঈশ্বরের অনস্তিত্বের প্রমাণ নহে। কোন পদার্থের অস্তিত্বের প্রমাণাভাবে তাহার অনস্তিত্ব প্ৰমাণ হইবে, যদি বিচারের এরূপ নিয়ম সংস্থাপন করা যায়, তাহা হইলে অনেক স্থানে প্ৰমাদ ঘটে।

  • বঙ্গদর্শন, ১২৮২, বৈশাখ। বঙ্গদর্শন এই প্ৰবন্ধের শিরোনাম ছিল, “মিল, ডার্বিন এবং হিন্দুধৰ্ম্ম৷” বৰ্ত্তমান শিরোনামে বিজ্ঞান শব্দের অর্থে “Science” বুঝিতে হইবে।