পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऊर्ज्व- SVG আমার এইরূপ কৰ্ত্তব্য আর এইরূপ অকৰ্ত্তব্য, তোমারও তদ্রুপ, রামের তদ্রুপ, যদুরও তদ্রুপ, সকল হিন্দুরই তদ্রুপ। সকল হিন্দুরাই যদি একরূপ কাৰ্য্য হইল, তবে সকল হিন্দুর কৰ্ত্তব্য যে একপরামর্শী, একমতাবলম্বী, একত্র মিলিত লইয়া কাৰ্য্য করে, এই জ্ঞান জাতি প্ৰতিষ্ঠার প্রথম ভাগ ; আৰ্দ্ধাংশ মাত্র। হিন্দুজাতি ভিন্ন পৃথিবীতে অন্য অনেক জাতি আছে। তাহাদের মঙ্গলমাত্রেই আমাদের মঙ্গল হওয়া সম্ভব নহে। অনেক স্থানে তাহদের মঙ্গলে আমাদের অমঙ্গল । যেখানে তাহদের মঙ্গলে আমাদের অমঙ্গল, সেখানে তাহদের মঙ্গল যাহাতে না হয়, আমরা তাহাই করিব । ইহাতে পরজাতিপীড়ন করিতে হয়, করিব । অপিচ, যেমন তাহাদের মঙ্গলে আমাদের অমঙ্গল ঘটিতে পারে, তেমনি আমাদের মঙ্গলে তাহদের অমঙ্গল হইতে পারে । হয় হউক, আমরা সে জন্য আত্মজাতির মঙ্গল সাধনে বিরত হইব। না ; পরজাতির অমঙ্গল সাধন করিয়া আত্মমঙ্গল সাধিতে হয়, তাহাও করিব। জাতিপ্রতিষ্ঠার এই দ্বিতীয় ভাগ । দেখা যাইতেছে যে, এইরূপ মনোবৃত্তি নিষ্পাপ পরিশুদ্ধ ভাব বলিয়া স্বীকার করা যাইতে পারে না । ইহার গুরুতর দোষাবহ বিকার আছে। সেই বিকারে, জাতিসাধারণের এরাপ ভ্ৰান্তি জন্মে যে, পরজাতির মঙ্গলমাত্ৰেই স্বজাতির অমঙ্গল, পরজাতির অমঙ্গলমাত্রেই স্বজাতির মঙ্গল বলিয়া বোধ হয়। এই কুসংস্কারের বশবৰ্ত্তী হইয়া ইউরোপীয়েরা অনেক দুঃখ ভোগ করিয়াছে। অনর্থক ইহার জন্যে অনেক বার সমরানলৈ ইউরোপ দগ্ধ করিয়াছে । স্বজাতি-প্রতিষ্ঠা ভালই হউক বা মন্দই হউক, যে জাতিমধ্যে ইহা বলবতী হয়, সে জাতি অন্য জাতি অপেক্ষা প্ৰবলতা লাভ করে । আজি কালি এই জ্ঞান ইউরোপে বিশেষ প্রধান, এবং ইহার প্রভাবে তথায় অনেক বিযম রাজ্যবিপ্লব ঘটতেছে। ইহার প্রভাবে ইটালি একরাজ্যভুক্ত হইয়াছে। ইহারই প্রভাবে বিষম প্রতাপশালী নুতন জন্মান সাম্রাজ্য স্থাপিত হইয়াছে । আরও কি হইবে বলা যায় না । এমত বলি না যে, ভারতবর্ষে এই জাতিপ্ৰতিষ্ঠা কস্মিন কালে ছিল না । ইউরোপীয় পণ্ডিতেরা সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, আৰ্য্যজাতীয়েরা চিরকাল ভারতবর্ষবাসী নহে। অন্যত্র হইতে ভারতবর্ষে আসিয়া, তদেশ অধিকার করিয়াছিল। প্ৰথম আৰ্যজয়ের সময়ে বেদাদির সৃষ্টি হয়, এবং সেই সময়কেই পণ্ডিতেরা বৈদিক কাল কহেন। বৈদিক কালে এবং তাহার অব্যবহিত পরেই জাতিপ্ৰতিষ্ঠা যে আৰ্য্যগণের মধ্যে বিশেষ বলবতী ছিল, তাহার অনেক প্ৰমাণ বৈদিক মন্ত্রাদিমধ্যে পাওয়া যায়। তৎকালিক সমাজ-নিয়ন্ত ব্ৰাহ্মণের যে রূপে সমাজ বিধিবদ্ধ করিয়াছিল, তাহাও ঐ জ্ঞানের পরিচয়স্থল ৷ আৰ্য্য