পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ (খ ) ক্ষত্রিয়ের রাজা বা রাজপুরুষ। যদি পৃথিবীর পুরাবৃত্তে কোন কথা নিশ্চিত প্ৰতিপন্ন হইয়া থাকে, তবে সে কথাটি এই যে, সাধারণ প্ৰজা সতেজঃ এবং রাজপ্রতিদ্বন্দ্বী না হইলে রাজপুরুষদিগের স্বভাবের উন্নতি হয় না, অবনতি হয়। যদি কেহ কিছু না বলে, রাজপুরুষেরা সহজেই স্বেচ্ছাচারী হয়েন। স্বেচ্ছাচারী হইলেই আত্মসুখরাত, কাৰ্য্যে শিথিল এবং দুক্ৰিয়ান্বিত হইতে হয়। অতএব যে দেশের প্রজা নিস্তেজ, নম্র, অনুৎসাহী, অবিরোধী, সেইখানেই রাজপুরুষদিগের ঐরােপ স্বভাবগত অবনতি হইবে। যেখানে প্ৰজা দুঃখী, অন্নবস্ত্রের কাঙ্গাল, আহারোপার্জনে ব্যগ্র, এবং সন্তুষ্টস্বভাব, সেইখানেই তাহারা নিস্তেজ, নম্র, অনুৎসাহী, অবিরোধী। ভারতবর্ষে তাই। সেই জন্য ভারতবর্ষের রাজগণ, মহাভারতর্কীৰ্ত্তিত বলশালী, ধস্মিঠ, ইন্দ্ৰিয়জয়ী রাজ্যচরিত্র হইতে মধ্যকালের কাব্যনাটকাদিচিত্রিত বলহীন, ইন্দ্ৰিয়াপরবশ, স্ত্ৰৈণ, অকৰ্ম্মঠ দশা প্রাপ্ত হইয়া, শেষে মুসলমান-হস্তে লুপ্ত হইলেন । যে দেশে সাধারণ প্রাক্তার অপস্থা ভাল, সে দেশে রাজপুরুষদিগের এরূপ দুৰ্গতি ঘটে না । তাহাব রাজার দুৰ্ম্মতি দেখিলে, ওঁ{হার প্ৰতিদ্বন্দ্বী হইতে পারে এবং হইয়া থাকে। বিরোধেই উভয় পক্ষের উন্নতি । রাজপুরুষগণ অনর্থক বিরোধের ভয়ে সতর্ক থাকেন । কিন্তু বিরোধে কেবল যে এই উপকার, ইহা নহে। নিত্য মল্লযুদ্ধে বল বাড়ে । বিরোধে মানসিক গুণসকলের সৃষ্টি এবং পুষ্টি হয়। নির্বিবরোধে তৎসমুদায়ের লোপ | শূন্দের দাসত্বে ক্ষত্রিয়েব ধন এবং ধৰ্ম্মের লোপ হইয়াছিল। রোমে প্লিবিয়ানদিগের বিবাদে, ইংলণ্ডের কমানদিগের বিবাদে প্ৰভুদিগোল স্বাভাবিক উৎকর্ষ জন্মিয়ছিল । (গ) ব্ৰাহ্মণ। যেমন অধঃশ্রেণীর প্রজার অবনতিতে ক্ষত্ৰিয়দিগের প্রভুত্ব বাড়িয পরিশেষে লুপ্ত হইয়াছিল, ব্ৰাহ্মণদিগেরও তদ্রুপ । অপর তিন বর্ণের অনুন্নতিতে ব্ৰাহ্মণের প্রথমে প্ৰভুত্ব বৃদ্ধি হয়। অপর বর্ণের মানসিক শক্তি হানি হওয়াতে তাহাদিগের চিত্ত উপধৰ্ম্মের বিশেষ বশীভূত হইতে লাগিল। দৌৰ্ব্বল থাকিলেই ভয়াধিক হয়। উপধৰ্ম্ম ভীতিজাত ; এই সংসার বলশালী অথচ অনিষ্টকারক দেবতাপূর্ণ, এই বিশ্বাসই উপধৰ্ম্ম । অতএব অপর বর্ণক্রয়, মানসিকশক্তিবিহীন হওয়াতে অধিকতর উপধৰ্ম্মপীড়িত হইল ; , ব্ৰাহ্মণের উপধৰ্ম্মের যাজক ; সুতরাং তঁহদের প্রভুত্ব বৃদ্ধি হইল। ব্ৰাহ্মণের কেবল শাস্ত্ৰজাল, ব্যবস্থাজাল বিস্তারিত করিয়া ক্ষত্ৰিয়, বৈশ্য, শূদ্রকে জড়িত করিত্যুে লাগিলেন । মক্ষিকাগণ জড়াইয়া পড়িল-নড়িবার শক্তি নাই। কিন্তু তথাপি উৰ্ণনাভের জাল ফুরায় না । বিধানের অন্ত নাই। এ দিকে রাজশাসন প্ৰণালী দণ্ডবিধি দায় সন্ধিবিগ্ৰহ প্রভৃতি হইতে আচমন, শয়ন, বসন, গমন, কথোপকথন, হাস্য, রোদন, এই সকল পৰ্য্যন্ত গ্ৰাহ্মণের রচিত বিধির দ্বারা নিয়মিত হইতে লাগিল । “আমরা যেরূপে বলি, সেইরূপে