পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গে ব্ৰাহ্মণাধিকার $ግ S পৌণ্ডকাশ্চৌড়দ্রাবিড়াঃ কাম্বোজা যবনা: শকাঃ। পারদাঃ পহলবাশ্চৈনা: কিরাত দরদাঃ খশাঃ ॥” এক্ষণে যাহাকে বঙ্গদেশ বলা যায়, তাহার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ পৌণ্ড নামে খ্যাত ছিল। যে অংশমধ্যে কলিকাতা, বৰ্দ্ধমান, মুরশিদাবাদ, তাহা সেই অংশের অন্তর্গত। যাহারা সবিশেষ অবগত হইতে চাহেন, তাহার। উইলসনকৃত বিষ্ণুপুরাণানুবাদের প্রদেশতত্ত্ববিষয়ক পরিচ্ছেদটি দেখিবেন। বঙ্গ, পুণ্ড, হইতে একটি পৃথক রাজ্য ছিল। এক্ষণে বাঙ্গালীতে ঢাকা বিক্রমপুর অঞ্চলকেই “বঙ্গদেশ” বলে—সেই প্ৰদেশকেই প্ৰাচীন কালে বঙ্গদেশ বলিত। কিন্তু অগ্ৰে পুণ্ড, পরে বঙ্গ । মহাভারতের সভাপর্বে আছে, ভীম দিগ্নিজয়ে আসিয়া পুণ্ডাধিপতি বাসুদেব এবং কৌশিকীকচ্ছবাসী মনৌজ রাজা, এই দুই মহাবল মহাবীরকে পরাজয় করিয়া বঙ্গরাজের প্রতি ধাবমান হইলেন। চৈনিক পরিব্রাজক হোয়েন্থ সাঙ, ভারতবর্ষে এই পুণ্ড বা পৌণ্ড, দেশে আসিয়াছিলেন। সেই দেশের রাজধানীর নাম পৌণ্ডবৰ্দ্ধন। জেনেরল কানিঙহাম বলেন যে, আধুনিক পাবনাই প্রাচীন রাজধানী পৌণ্ডবৰ্দ্ধন। বোধ হয়, মালদহের অন্তঃপাতী পাণ্ডুয়া নামক গ্রামের অস্তিত্ব তিনি অবগত নহেন। এই পাণ্ডুয়াই যে প্রাচীন পৌণ্ড বৰ্দ্ধন, এমত বিবেচনা করিবার বিশেষ কারণ আছে । অতএব আধুনিক বঙ্গদেশের প্রধানাংশকে পূর্বে পৌণ্ডদেশ বলিত । মনুর শেষোদ্বত বচনে বোধ হইতেছে যে, তখন এ দেশে ব্ৰাহ্মণের আগমন হয় নাই বা আৰ্য্যজাতি আইসে নাই । ইহা বলা যাইতে পারে সে, যেখানে পৌণ্ড, দিগকে লুপ্তক্রিয় ক্ষত্ৰিয় মাত্র বলা হইতেছে, সেখানে এমত বুঝায় না যে, যখন মনুসংহিতা সঙ্কলন হয়, তখন বঙ্গদেশে আৰ্য্যজাতি আইসে নাই। বরং ইহাই বলা যাইতে পারে, তাহার বহু পূৰ্ব্বে ক্ষত্ৰিয়েরা এ দেশে আসিয়া আচারভ্ৰষ্ট হইয়া গিয়াছিলেন । যদি তাহা বলা যায়, তবে চীন, তাতার, পারশ্য এবং গ্রীসূ সম্বন্ধেও তাহা বলিতে হইবে। কেন না, পৌণ্ডগণ সম্বন্ধে যাহা কথিত হইয়াছে, চৈন, শক, পহলাব এবং যবন সম্বন্ধেও তাহা কথিত হইয়াছে। মনু শক, যবন, পঙ্কলার, (কেহ লিখেন। পহ্নব ) এবং চৈনাদিগকে যে শ্রেণীভুক্ত করিয়াছেন, এতদেশবাসী পৌণ্ড দিগকে সেই শ্রেণীতে ফেলিয়াছিলেন। ইহাতে স্পষ্টই উপলব্ধি হইতেছে যে, মনুসংহিতাসঙ্কলনকালে বঙ্গদেশ ব্ৰাহ্মণবিহীন. অনাৰ্য্য জাতির বাসস্থান छिव्श । সমুদ্রতীর হইতে পদ্মাপৰ্য্যন্ত প্রদেশে এক্ষণে বহুসংখ্যক পুড়া ও পোদ জাতীয়ের বাস আছে। পুড়া শব্দটি পুণ্ড, শব্দের অপভ্ৰংশ বোধ হয় ; পোদ শব্দও তাঁহাই বোধ হয়। অতএব এই পুড়া ও পোদ জাতীয়দিগকে সেই পৌণ্ড দিগের বংশ বিবেচনা