পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Š)\სტ বিবিধ প্ৰবন্ধ গ্রন্থের প্রত্যেক অংশ পৃথক পৃথক করিয়া পাঠককে দেখাইয়াছি । এরূপে গ্রন্থের প্রকৃত দোষগুণের ব্যাখ্যা হয় না। এক একখানি প্রস্তর পৃথক পৃথক করিয়া দেখিলে তাজমহলের গৌরব বুঝিতে পারা যায় না। একটি একটি বৃক্ষ পৃথক পৃথক করিয়া দেখিলে উদ্যানের শোভা অনুভূত করা যায় না। এক একটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বর্ণনা করিয়া মনুষ্যমূৰ্ত্তির অনির্বচনীয় শোভা বর্ণন করা যায় না। কোটি কলস জলের আলোচনায় সাগবমাহাত্ম্য অনুভূত করা যায় না । সেইরূপ কাব্যগ্রন্থের । এ স্থান ভাল রচনা, এই স্থান মন্দ রচনা, এইরূপ তাহার অনস্তর সীতাশপথ বিষয়ে রামের অভিপ্ৰায় জানিয়া দেবগণ ব্ৰহ্মাকে পুরো বৰ্ত্তী করিয়া সেই স্থলে সমাগত হইলেন এবং আদিত্যগণ বসুগণ রুদ্রগণ বিশ্বদেবগণ বায়ুগণ সকল সাপ্যগণ দেবগণ সকল পরমর্ষিগণ নাগগণ পক্ষিগণ সকলেই হৃষ্টান্ত:করণ ত ইয়া সে স্থলে আগমন করিলেন । রাম সমাগত সেন্ট সকল দেবগণ ঋষিগণকে দেখিয়া পুনর্বার বাল্মীকিকে সম্বোধন করিয়া বলি৩ে লাগিলেন । ...ই মুনি শ্ৰেষ্ঠ । পবিত্ৰ ঋমিবাক্যে “আমার প্রতায় আছে । জগতে বিশুদ্ধশালিনী সীতার প্রতি আমার প্রীতি থাকুক ; কিন্তু সীতাশপথ দৰ্শনজন্য কৌতুহলাক্রান্ত হইয়া সকলে সমাগত হইয়াছেন । তখন দিব্য গন্ধবিশিষ্ট মনোহর এবং সর্বপাপপুণ্য-সাক্ষী পবিত্র বায়ু প্ৰবাহিত হইয়। সেই জনবৃন্দকে আহিলাদিত করিল। পূর্বকালে সত্যযুগের ন্যায়। সেই আশ্চয্য অচিন্তনীয় ব্যাপার, সকল রাষ্ট্র হইতে সমাগত জনমণ্ডলী সমাহিত হইয়া দেখিতে লাগিল। কাষায়-বস্ত্রপরিধান সীতা সকলকে সমাৰ্গত দেখিয়া অধোমুখী, অধোদৃষ্টি এবং কৃতাঞ্জালু হইয়া এইরূপ কহন্তে লাগিলেন । যদি আমি মনে৩ে ও রাম ভিন্ন অন্য চিন্তা না করিয়া থাকি, তবে পৃথিবী দেবী আমাকে দিবীর প্রদান করুন ! যদি আমি কায়মনোবাক্যে রামাৰ্চন করিয়া থাকি, তবে পৃথিবীদেবী আমাকে বিবর প্রদান করুন । “আমি রাম ভিন্ন জানি না,” আমার এই বাক্য যদি সত্য হয়, তবে পৃথিবীদেবী আমাকে বিবার প্রদান করুন । লৈদেহী এইরূপ শপথ করিলে, তখন অমিতবিক্রম, দিবা রত্নালঙ্কত নাগগণকর্তৃক মস্তকে বাহিত্, দিব্য কান্তি, দিব্য সিংহাসন রসাতল হইতে সহসা আবির্ভূত হইল এবং সেই স্থলে পৃথিবীদেবী দুই বাহুদ্বারা সীতাকে গ্ৰহণ করিয়া এবং স্বাগত প্রশ্নো অভিনন্দন করিয়া সেই উত্তমাসনে উপবেশন করাষ্টলেন । সিংহাসনারূঢ়া সেই সীতাকে রসাতলে প্ৰবেশ করিতে দেখিয়া। তদুপরি স্বৰ্গ হইতে পুষ্পবৃষ্টি হইতে লাগিল এবং দেবগণের অতি বিপুল সাধুবাদ হঠাৎ টিথিত হইল। সীতার রসাতল প্ৰবেশ দেখিয়া অন্তরক্ষাগত দেবগণ হৃষ্টান্ত:করণ হইয়া, “সীতা সাধু সীতা সাধু র্যাহার এইরূপ চরিত্র” ইত্যাদি নানাপ্রকার বাক্য কহিতে লাগিলেন। যজ্ঞস্থলগত সেই সকল মুনিগণ \3 মনুষ্যশ্রেষ্ঠ કરે অদ্ভুত ঘটনাহোঁ", বিস্ময় হইতে বিরত হইতে পারিলেন না । তৎকালে আকাশে, ভূতলে স্থাবর জঙ্গম পদার্থ ও মহাকায় দানবগণ এবং পাতালে নাগগণ সকলেই হৃষ্টান্ত:করণ হইয়াছিলেন । তঁহাৱা হৃষ্টমনে শব্দ করিতে লাগিলেন ; কাহারা বা ধ্যানস্থ হইলেন, কাহারাও বা রামকে দেখিতে লাগিলেন এবং কেহ কেহ বা নিঃসংজ্ঞা হইয়া সীতাকে অবলোকন করিতে লাগিলেন । এইরূপে সমাগত সেই সকল ঋষি প্রভৃতির সীতার রসাতল প্ৰবেশ দেখিয়া এই প্রকার সমাগম হইয়াছিল এবং সেই মুহুর্তে সমুদায় জগৎ সমকালেই মোহিত হইয়াছিল।